ভেন্টিলেশনে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝে প্রসব করলেন মা, কোভিডের ধূসর বিশ্বে একমাস পর ঘটল অলৌকিক

গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন মা

ভেন্টিলেশনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে জন্ম দেন সন্তানের

মা ও শিশু-কে বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিলেন চিকিৎসকরা

করোনা আক্রান্ত হলেন এক ডাক্তার, কিন্তু কী ঘটল ওই মা এবং তাঁর সন্তানের

 

amartya lahiri | Published : Aug 26, 2020 11:34 AM IST / Updated: Aug 27 2020, 02:44 PM IST

অনেকেই বলছেন অলৌকিক। তবে, তার সঙ্গে স্বীকার করছেন এই অলৌকিক ঘটনাটা ঘটতোই না যদি হায়দরাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তাররা তাঁদের নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি না নিতেন। গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে থাকাকালীন গুরুতর করোনা সংক্রমণ হয়েছিল এক গর্ভবতী মহিলার দেহে। এতটাই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছিল কোভিড যে তাঁকে ভেন্টিলেটরের সহায়তায় বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছিল। ওই অবস্থাতেই সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন মা-শিশু দুজনেই।

তবে, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি বিপদের মেঘ ভিড় করেছিল মঞ্জুলা নামে ৩৪ বছর বয়সী ওই মহিলার পরিবারের উপর। অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় ১৫ জুলাই মঞ্জুলা-কে অ্যাপোলো হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তি করার পরই তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছিল। রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্বের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল। তাঁর প্রাণ বাঁচাতে ডাক্তাররা ভেন্টিলেটরের সহায়তা দিয়েছিলেন। তবে তারপরেও তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল বলে জানতেন ডারক্তাররা।

তাঁরা জানিয়েছেন ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়েছে এমন গর্ভবতী মহিলাদের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় সন্তান জন্মের আগেই কিংবা প্রাক-মেয়াদী সন্তান প্রসবের সময়ই মৃত্যু হয়। এই ক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কোভিড চিকিত্সা চলাকালীন মঞ্জুলা সাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপরই অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তারদের একটি দল সিন্ধান্ত নেয় মা-এর মৃত্যু হওয়ার আগেই অন্তত শিশুটিকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা তাঁরা করবেন।

সেই, সিদ্ধান্ত মতো গত ১৭ জুলাই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মঞ্জুলার প্রসব ঘটানো হয়েছিল। পুরোটা সময় তিনি ছিলেন ভেন্টচিলেশনে। জন্মের পর শিশুটিরও কোনও প্রাণের সাড়া ছিল না। ডাক্তাররা ওষুধ প্রয়োগ করে শিশুটির হৃৎস্পন্দন চালু করতে পেরেছিলেন, কিন্তু তারপরও শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। এরপর আবার শিশুটির রক্ত​​প্রবাহে সংক্রমণও হয়। তাতে বিপদ আরও বেড়েছিল।

হাল ছাড়েননি চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীরা। আর শিশুটির জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটে যায় প্রথম অলৌকিক ঘটনা। ভেন্টিলেটর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মা, মঞ্জুলা। গত ১০ অগাস্ট তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটিও দেওয়া হয়েছিল। তবে তখনও ঝুঁকি ছিল শিশুটির। ধীরে ধীরে সে চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছিল বটে। অবশেষে গত সোমবার সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। মঙ্গলবারই হাসপাতালে এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন তার বাবা-মা।

তবে এই মা ও শিশুকে সুস্থ করে তুলতে গিয়ে কোভিড-তে সংক্রামিত হয়েছেন, ক্রিটিকাল কেয়ার টিমের একজন চিকিৎসক-ও। তবে এই এত প্রতিকূলতার কাটিয়ে এই অলৌকিক ঘটনা ঘটার পর তাঁরা মনে করছেন জীবনের ঝুঁকি নেওয়াটা তাঁদের সার্থক হয়েছে।

 

Share this article
click me!