আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের ২৩ জানুয়ারি জারি করা একটি অফিসিয়াল চিঠিতে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এবং ভারতীয় কূটনীতিকরা এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেবেন।
আফগানিস্তানে রেশন ও ওষুধের চালান পাঠানোর পর আজ থেকে তালেবান সরকারের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ দিতে চলেছে ভারত। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে এই প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হবে। চারদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণের জন্য আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের বিদেশমন্ত্রক তার সব কূটনীতিকদের কাছে একটি চিঠি লিখে এতে অংশ নিতে বলেছে। বিদেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারতের এই পদক্ষেপকে একটি বড় কূটনৈতিক চাল হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা
আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রকের ২৩ জানুয়ারি জারি করা একটি অফিসিয়াল চিঠিতে স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তথ্য শেয়ার করা হয়েছে। আফগান সরকারের জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এবং ভারতীয় কূটনীতিকরা এই প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশ নেবেন। আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রককে ভারতের বিশেষজ্ঞদের দেওয়া এই প্রশিক্ষণেরও অনেক কূটনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
বিদেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। তিনি বলেছেন যে আফগানিস্তান যেহেতু সারা বিশ্বে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, সেহেতু কোনো বিতর্কে না পড়ে এখন দৃঢ়ভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান নিজের স্বার্থে আফগানিস্তানকে প্রতিবেশী দেশ ছাড়া আর কিছু মনে করছে না। সেজন্য আফগানিস্তান সেসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন শুরু করেছে যেখান থেকে তারা লাভবান হতে পারে। এই পর্বে আফগানিস্তান শুরু থেকেই ভারতকে সঙ্গী করার চেষ্টায় ছিল।
তালেবানদের জন্য, ভারতের সাথে সম্পর্ক একটি লাভজনক চুক্তি
মঙ্গলবার থেকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে চার দিনের কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়ে, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিদেশী কর্মকর্তা বলেছেন যে অতীতে ভারত আফগানিস্তানে তার সেনাবাহিনী এবং কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। কারণ তালেবান সবসময় ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এ কারণেই, গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে, তালেবানরা পাকিস্তানের সাথে কেবল কঠোর আচরণই করেনি বরং এর সমালোচনাও করেছে। বিদেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবানরা ভালো করেই জানে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে তারা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে না এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না।
এই কারণেই আফগানিস্তান ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেছে। বিদেশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এ রিয়াজ বলেছেন, গোটা বিশ্বে ভারতের কূটনীতিকদের আলাদা পরিচয় রয়েছে। আফগানিস্তানের কূটনীতিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সে কারণে আফগানিস্তানও ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান এবং কূটনীতিকদের সাথে তার কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। তিনি বলেছেন যে এটা সত্য যে ভারত তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে না, তবে কৌশলগতভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
ভারত আফগানিস্তানকে সাহায্য করেছে
জেনে রাখা ভালো তালেবান যখন ২০২১ সালে আফগান সরকারকে হটিয়ে সরকার গঠন করেছিল, তখন বিশ্বের সমস্ত দূতাবাস বন্ধ ছিল। কিন্তু চিন ও পাকিস্তান রয়ে গেছে। তিনি বলেছেন যে প্রাথমিক পর্যায়ে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এটিকে নিজেদের জন্য একটি লাভজনক চুক্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিল, তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এটি অনুভব করেছিল যে বিশ্বের দেশগুলির সাথে আরও ভাল সম্পর্কের জন্য, সম্পর্ক জোরদার করা তাদের পক্ষে উপকারী হবে। ভারতের মত অন্যান্য দেশের সাথে এটা একটা চুক্তি। সেই কারণেই আফগানিস্তান ভারতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন শুরু করে। তিনি বলেছেন, ভারত অতীতে যেভাবে আফগানিস্তানকে সাহায্য করেছে তাতে আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কৌশলগতভাবে মজবুত হয়েছে। ভারত সম্প্রতি পাকিস্তান হয়ে সড়কপথে আফগানিস্তানে ৫০ ট্রাক রেশন পাঠিয়েছে। এর আগে ভারত আফগানিস্তানে পাঁচবার জীবনরক্ষাকারী ওষুধের পাশাপাশি ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধ পাঠিয়েছে করোনা থেকে বাঁচতে।