যুগটাকে বলা হচ্ছে 'এজ অফ স্পেস' বা 'মহাকাশের সময়'। সেই মহাকাশ বিজয়ের পথে আরও একবার সাফল্য পেল ইসরো, মহাকাশে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে এগোলো আরও এক ধাপ।
যুগটাকে বলা হচ্ছে 'এজ অফ স্পেস' বা 'মহাকাশের সময়'। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাকাশের অজানায় পাড়ি দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশ এবং কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও। পিছিয়ে নেই ভারতও। করোনা মহামারির মধ্যেও একটু একটু করে গগনযান অভিযান, অর্থাৎ মহাকাশে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে ইসরো। তার একটা বড় ধাপ পাড় করল বৃহস্পতিবার। এদিন ভারতের মগাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, ভারতের সবচেয়ে ভারী অপারেশনাল রকেট জিএসএলভি মার্ক ৩ রকেটের ইঞ্জিন, কোর স্টেজ এল ১১০ বা বিকাশ (বিক্রম এ সারাভাই) ইঞ্জিন-এর তৃতীয় পরীক্ষা-উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে।
এই ইঞ্জিন সমেত রকেটি এর আগে বেশ কয়েকবার মহাকাশে গিয়েছে। কিন্তু, এই পরীক্ষাটি ছিল একটি নতুন বিষয়ের মূল্যায়নের। রকেটের হিউম্যান-রেটিং অর্থাৎ মানুষ চলাচলের জন্য নিরাপদ কিনা, তা জানার পরীক্ষা। সহজ কথায় বললে, এতদিন কার্গো বা মালবাহী রকেট ছিল জিএসএলভি মার্ক ৩। এখন সেটি মানব বহনের পক্ষে নির্ভরযোগ্য করে তোলার জন্য রকেটটির অদলবদলের কাজ চালাচ্ছে ইসরো। আসলে উপগ্রহগুলি বহনকারী কার্গো রকেটগুলির ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হয় সেটি কত বেশি ওজনের উপগ্রহ বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি মহাকাশে বহন করতে পারে। অন্যদিকে, মানববাহী রকেটগুলির ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই হল প্রধান বিষয়।
এছাড়া, কার্গো রকেটগুলির ক্ষেত্রে মহাকাশে পৌঁছনোর পর রকেটটিকে পৃথিবী থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভারতের হিউম্যান স্পেসফ্লাইট বা মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রকল্পের ক্ষেত্রে, মানববাহী ক্যাপসুল বা মহাকাশযানটি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে যাওয়ার পর, নভোশ্চরদের নির্ধারিত সময়ের জন্য মহাকাশে তাদের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তারপর, মহাকাশযানটি ফের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে। বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণের বাধা এবং চরম উচ্চ তাপমাত্রার বাধা অতিক্রম করে সেটির সমুদ্রে নামার কথা। তারপর সেখান থেকে মহাকাশচারীদের উদ্ধার করা হবে। কাজেই রকেটটির হিউম্যান রেটিং পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরী।
আরও পড়ুন - বছরের শেষেই ISRO-র আদিত্য এল- ১ অভিযান - চাঁদের পর লক্ষ্য এবার সূর্য, হবে কি ইতিহাস
আরও পড়ুন - ISRO-র সদর দফতরেই খাওয়ানো হয়েছিল বিষ, বিস্ফোরক অভিযোগ শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় বিজ্ঞানীর
আরও পড়ুন - শুধু লাদাখ সীমান্তেই নয়, মহাকাশেও ভারতের উপর হামলা চালিয়েছিল চিন, কী বলছে ইসরো
জিএসএলভি মার্ক ৩ রকেটকে নিরাপদে মহাশূন্যে মানুষ নিয়ে যাওয়ার মতো সক্ষম করতে ইসরো সামগ্রিকভাবে রকেটটির লঞ্চ সিস্টেমটিকেই শক্তিশালী করছে। এছাড়া উচ্চতর নির্ভরযোগ্যতা পেতে রকেটটির নকশা এবং উপাদানগুলিকেও অদলবদল করা হচ্ছে। এইসব পরিবর্তনের জন্য, প্রতিটি হার্ডওয়্যারের অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন। সাধারণত প্রতিটি ইঞ্জিন দুবার করে পরীক্ষা করে ইসরো। তবে গগনযানের ক্ষেত্রে পাঁচ-ছবার করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিনের, বিকাশ ইঞ্জিনের পরীক্ষা ছিল ইঞ্জিনটির তৃতীয় সফল পরীক্ষা।
জিএসএলভি মার্ক ৩ রকেটটটিতে বিকাশ ইঞ্জিন (এল ১১০ কোর স্টেজ) ছাড়াও দুটি এস ২০০ জমাট জ্বালানী বুস্টার ইঞ্জিন, দুটি তরল জ্বালানী ইঞ্জিন এবং একটি সিই-২০ ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন (তরল হাইড্রোজেন এবং তরল অক্সিজেনের মিশ্রণকে ব্যবহার করে জ্বালানী হিসাবে) রয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসে কায়োগোজেনিক ইঞ্জিনটি এবং এস ২০০ বুস্টার ইঞ্জিনগুলির পরীক্ষা করা হবে।