লাদাখের (Ladakh) প্রবল ঠান্ডাতেও কীভাবে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে বিশুদ্ধ জল? প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের (Republic Day Parade) কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের (Ministry of Jal Shakti) ট্যাবলোয় দেখা যাবে সেটাই।
এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের (Republic Day Parade) অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের (Ministry of Jal Shakti) ট্যাবলো প্রদর্শনী। এই ট্যাবলোর বিষয়, 'জল জীবন মিশন: বদলাচ্ছে জীবন' (Jal Jeevan Mission : Changing Lives)। এই ট্যাবলোতে দেখানো হবে, লাদাখের (Ladakh) ১৩,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় কঠোর শীতে, কীভাবে জল জীবন মিশন লাদাখের মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য আনছে এবং জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করছে। ট্যাবলোতে লাদাখের স্থানীয় মহিলাদের 'ফিল্ড টেস্ট কিটস' (FTKs) ব্যবহার করে জলের গুণমান পরীক্ষা করতে দেখা যাবে।
ভারতের প্রতিটি ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য 'হর ঘর জল' (Har Ghar Jal) প্রকল্প নিয়েছে মোদী সরকার (Modi Govt)। তবে, লাদাখের বাড়িতে বাড়িতে কল থেকে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। শীতকালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাই থাকে শূন্যের নিচে, রাতে তো তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এই চরম শীতে পরিষ্কার জলের উত্সগুলি জমে যায়। এছাড়া, অকার্যকর হয়ে যায় জলের পাইপগুলি, জল জমে ফেটে যায়। সেইসঙ্গে লাদাখের গ্রামগুলিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থিত, দেশের সর্বনিম্ন জনঘনত্ব এই অঞ্চলেরই। বৃষ্টিপাতেরও অভাব রয়েছে। শীতকালে বিভিন্ন গিরিখাতগুলি বন্ধ হয়ে গিয়ে, কয়েক মাস দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে লাদাখ। ফলে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহও ব্যাহত হয়। দুর্গম এলাকাগুলিতে তো জলের লাইন তৈরি করা আরও কঠিন।
তবে, থেমে থাকেনি জলশক্তি মিশন। জল জমে সরবরাহের পাইপ যাতে ফেটে না যায়, তার জন্য নিয়মিত জিআই পাইপের বদলে লাদাখে 'এইচডিপিই পাইপ' ব্যবহার করা হয়। প্রধান জল সরবরাহের লাইনকে অনেকটাই নীচে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ঠান্ডা অনেকটাই কম, জল জমে যায় না। উপরের অংশে পাইপগুলিকে ৪ ইঞ্চি পুরু কাচের উল, কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, যাতে বাইরের তাপমাত্রা প্রভাব ফেলতে না পারে। সৌর শক্তিও জল সরবরাহ শৃঙ্খলাকে বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হিমায়িত জলের উত্স থেকে জল তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৮.৬ লক্ষেরও বেশি মহিলাকে বাড়িতে পরিষ্কার জল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এফটিকে ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিটে, একটি ডিজিটাল বোর্ডে জলের তাপমাত্রা, ক্লোরিনের পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রদর্শিত হয়।
জলশক্তি মন্ত্রকের প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোর বিষয়ে, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত (Gajendra Singh Shekhawat) বলেছেন, ২০১৯ সালের অগাস্টে এই প্রকল্প ঘোষণার পরের ২৯ মাসে, ভারতে ৫.৬৩ কোটিরও বেশি গ্রামীণ পরিবার, ৮.৪ লক্ষ স্কুল এবং ৮.৬ লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কলের জল সরবরাহ করা হয়েছে। ঘোষণার সময় মাত্র ৩.২৩ কোটি বাড়িতে কলের জল সরবরাহ হত। আজ ৮.৮৭ কোটিরও বেশি বাড়িতে তা পৌঁছে গিয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে মহিলা ও শিশুদের যে পানীয় জল বয়ে আনতে হত, সেই কষ্ট দূর করেছে জলশক্তি মন্ত্রক। জল জীবন মিশন, দেশের সবচেয়ে কঠিন ভূখণ্ডে কাজ করছে। লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ বা উত্তরাখণ্ডের উচ্চ এলাকাগুলিতে বা রাজস্থান ও গুজরাটের মরুভূমিতে, যেখানে পানীয় জলের অভাব ছিল, সেইসব এলাকাতেও কলের জল সরবরাহ করছে।