ক্রমেই একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনার স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে উত্তরপ্রদেশ। ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহের ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরেই খবরের শিরোনামে ছিল যোগীরাজ্য। এবার একমাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটল গোবলয়ের এই রাজ্যে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সাংবাদিকের নাম রতন সিং । বালিয়ার ফেফানায় তাঁকে খুন করা হয়। হত্যাকারীরা ওই সাংবাদিকের সঙ্গে ছিল বলেই মনে করছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় যাদব জানান, রতন সিং একটি হিন্দি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক ছিলেন। সোমবার রাতে বলিয়ার ফেফানা এলাকায় গুলিতে তিনি নিহত হন। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালিয়া। সোমবার রাত ৯টা নাগাদ সেখানেই নিজের গ্রামেই খুন হন ৪২ বছরের সাংবাদিক। ঘটনার যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা সকলেই সাংবাদিক রতন সিং-এর দূরসম্পর্কের আত্মীয় বলেই জানা যাচ্ছে।
পুলিশের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণেই এই খুন। ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (আজমগড় রেঞ্জ)সুভাষ দুবে বলেছেন, রতন সিং ও তাঁর আত্মীয়দের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই জমিজায়গার দখল নিয়ে বিবাদ চলছিল। অভিযুক্তরা তাঁর গ্রামের বাড়ির কাছে একটি পাঁচিল তুলেছিল যেটা রতন ভেঙে দেন। তারপরই অশান্তি চরমে ওঠে। সোমবার রাতে কোনও খবর সংগ্রহের জন্য তিনি নিজের গ্রামেই গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে বচসা শুরু হয় অভিযুক্তদের। হাতাহাতির পর্যায়ে গেলে রতন সেখান থেকে পালাতে চেষ্টা করেন। তাঁর পিছু নেয় অভিযুক্তরা। পিছন থেকেই পর পর গুলি চালায় তারা। রক্তাক্ত লুটিয়ে পড়ের রতন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ডিআইজির দাবি, পারিবারিকর সমস্যার জন্যই খুন হতে হয়েছে সাংবাদিককে, আর অন্য কোনও কারণ নেই।
যদিও মৃতের পরিবার পুলিশের এই দাবি অস্বীকার করেছে। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ মিথ্যা ঘটনা সাজাচ্ছে। রতন সিং-এর বাবার অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদ ছিল ঠিকই, তবে সেই বিবাদের কারণে রতনকে খুন করা হয়নি। এর পিছনে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে। গোটা ঘটনাকেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে সাংবাদিক খুনের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মৃতের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকার অনুদানও ঘোষণা করেছেন তিনি।
এর আগে গত জুলাই মাসেই এক সাংবাদিক হত্যা নিয়ে শোরগোল উঠেছিল উত্তর প্রদেশে। সেবার বিক্রম যোশি নামক এক স্থানীয় সাংবাদিককে গাজিয়াবাদের কাছে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ভাইঝিকে একদল দুষ্কৃতী উত্যক্ত করায় প্রতিবাদ করেছিলেন বিক্রম। তারই মাশুল গুণতে হয় তাঁকে। গাজিয়াবাদে দুই মেয়ের চোখের সামনে প্রকাশ্য রাস্তায় সাংবাদিক বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা। মাস পেরোতে না পেরোতেই সেই যোগীরাজ্যেই ফের খুন হলেন আরও এক সাংবাদিক।