রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা কংগ্রেস আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ২০০৪ সালের ফর্মুলা চেষ্টা করতে পারে। যা সেই বছর NDA-কে ২৬৯টি আসন থেকে ১৩৮টি আসনে নামিয়ে এনেছিল। এই ফর্মুলার কারণে পাঁচটি রাজ্যে এনডিএ একশোর অঙ্কও পার করতে পারেনি।
বিরোধী দলগুলি আসন্ন লোকসভা নির্বাচন ২০২৪-এর বিউগল বাজিয়ে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিহারের পাটনায় ১৫টি বিরোধী দলের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বিজেপি ও মোদী ম্যাজিকের বিরুদ্ধে কীভাবে আন্দোলন করা যায় এবং ভবিষ্যৎ কৌশল কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পরে, যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধী দলগুলি জানিয়েছে যে এবার ২০২৪ সালে লড়াই হবে বিরোধী বনাম বিজেপির। একইসঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে নরম মনোভাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে কংগ্রেস। এই অবস্থায় ক্ষমতায় ফেরার প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে হাত শিবির।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা কংগ্রেস আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ২০০৪ সালের ফর্মুলা চেষ্টা করতে পারে। যা সেই বছর NDA-কে ২৬৯টি আসন থেকে ১৩৮টি আসনে নামিয়ে এনেছিল। এই ফর্মুলার কারণে পাঁচটি রাজ্যে এনডিএ একশোর অঙ্কও পার করতে পারেনি।
কী ছিল কংগ্রেসের এই ফর্মুলা?
কংগ্রেস ১৯৯৯ সালে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কিন্তু শরদ পাওয়ার কংগ্রেসের সাথে বিচ্ছেদের পরে, খুব একটা ভালো ফল করেনি হাত শিবির। নির্বাচনের ফলাফল এলে দেখা যায় এনডিএ ২৬৯টি আসন পেয়েছে ও অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার গঠিত হয়। কংগ্রেস এই পরাজয় নিয়ে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। এর পরে, ২০০৪ সালে, সোনিয়া গান্ধী এনডিএ-র সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাঁচটি রাজ্যের জন্য একটি ফর্মুলা তৈরি করেছিলেন, যা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হয়। এই রাজ্যগুলিতে, কংগ্রেস একই মতাদর্শের ৬টি আঞ্চলিক দলের সাথে জোট গঠন করেছিল। এই দলগুলির মধ্যে রয়েছে বিহারে আরজেডি-এলজেপি, ঝাড়খণ্ডে জেএমএম, মহারাষ্ট্রে এনসিপি, অন্ধ্রপ্রদেশে টিআরএস এবং তামিলনাড়ুতে ডিএমকে। এই জোট থেকে কংগ্রেস এতটাই উপকৃত হয়েছিল যে কেন্দ্রে ফিরে আসে।
কংগ্রেস জিতেছিল ১৪৫টি আসন
২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে, কংগ্রেস মোট ৪১৭ জন প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে ছিল। যার মধ্যে কংগ্রেস ১৪৫টি আসনে জয়ী হয়। যেখানে বিজেপি ৩৬৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। যেখানে তা কমে হয়েছে মাত্র ১৩৮টি আসন। একই সময়ে, কংগ্রেস জোট গঠন করেছিল এমন পাঁচটি রাজ্যের মোট ১৮৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ১১৪টি আসন জিততে সক্ষম হয়েছিল, যার মধ্যে ৬১টি আসন কংগ্রেস এবং ৫৬টি আসন জোটের হাত ধরে জিতেছিল।
এই সূত্র ধরেই কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। যেখানে বামফ্রন্ট পায় ৫৯টি আসন, এসপি পায় ৩৫টি এবং বিএসপি ১৯টি আসন পায়। একই সময়ে, এনডিএ এবং অন্যান্য বিরোধী দলের খাতায় আসে মাত্র ৭৪টি আসন। তার মানে কংগ্রেসের এই কৌশলের কারণে পাঁচ রাজ্যে এনডিএ একশোর ঘরও ছাড়াতে পারেনি।
তবে গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল গড়িয়েছে ২০০৪ সালের পর থেকে। ২০০৪ সাল থেকে অনেক আঞ্চলিক দল ইউপিএ ছেড়েছে। এর মধ্যে জেডিএস, এলজেপি, বিএসপি, টিআরএস, টিডিপি এবং বিজেডি সহ অনেক দল নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। বাংলায় তৃণমূল ও বামেদের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। কিন্তু এখন কংগ্রেস বিরোধী ঐক্যের অংশ হয়ে একই ফর্মুলা অনুসরণ করছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে আসন বণ্টন নিয়ে। কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের ওপর নজর রাখছে বিজেপি। কারণ বিজেপি জানে যে ২০২৪ সালে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হলে তার জন্য পথ কঠিন হতে পারে।