ওরা দয়িতাপতি। জগন্নাথদেবের নব বেশ দেখতে হাজির হয়েছিলেন সেবায়েতরাও। তবে খুদে দয়িতাপতিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবথেকে বেশি। তাদের কারও বয়স চার মাস, কারও ছ’মাস। তবে সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে ২৯ দিনের অক্ষয়।
রাত পোহালেই রথযাত্রা। আর তার আগে জগন্নাথ দেব তাঁর খুদে সেবায়েতদের থেকে মাখলেন তেল, চন্দন। কচি হাত দিয়ে ঠাকুরের গায়ে তেল, চন্দন লেপনের ভঙ্গি দেখে হাসি চেপে রাখতে পারেননি সেখানে উপস্থিত অন্য সেবায়েতরাও। তবে প্রথমে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে কান্না জুড়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু, জগন্নাথ দেবের কাছে গিয়েই তাদের সব কান্না থেমে যায়। বরং একগাল হাসি নিয়ে ঠাকুরের সেবায় লেগে পড়ে তারা।
আরও পড়ুন- স্নানযাত্রার পর রথযাত্রার আগে কেন ভক্তদের দর্শন দেন না জগন্নাথদেব
ওরা দয়িতাপতি। জগন্নাথদেবের নব বেশ দেখতে হাজির হয়েছিলেন সেবায়েতরাও। তবে খুদে দয়িতাপতিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবথেকে বেশি। তাদের কারও বয়স চার মাস, কারও ছ’মাস। তবে সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে ২৯ দিনের অক্ষয়।
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এদিন গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে তা স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের সঙ্গে সঙ্গে চলে মূর্তির সাজসজ্জা। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তাই এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তিনি। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই সেই সময়টা ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এমনকী, এই কয়েকটা দিন তাঁর পুজোও হয় না। আর জ্বর থেকে উঠেই রথে চেপে মাসির বাড়িতে রওনা দেন তিনি।
আর রথযাত্রার আগে জগন্নাথদেবকে জ্বর থেকে সুস্থ করে তোলার জন্য বিশেষ সেবায়েত নিয়োগ করা হয়। আর সেই তালিকাতেই যোগ দিয়েছে ২৯ দিনের ওই খুদে। ২৯ দিন বয়সে নতুন দয়িতাপতির নিয়োগ বিরল বলেই জানা গিয়েছে। রীতি অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথের অসুস্থতাপর্ব, আরোগ্য, রথে আরোহণ থেকে উল্টোরথের পরে মন্দিরে ফিরে আসা পর্যন্ত সব কিছুর দায়িত্বে থাকেন সেবায়েতরা। এরা আদিবাসী বা শবর বংশোদ্ভুত হন।
আরও পড়ুন- করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক, রিপোর্ট নেগেটিভ হলেই পুরীতে রথ টানতে পারবেন সেবায়েতরা
কথিত আছে পুজো শুরু হওয়ার আগে এই শবররাই নীলমাধব রূপে তাঁকে পুজো করতেন। পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের হাতে মন্দিরে জগন্নাথদেবের পুজো চালু হলেও শবরদের কিছু বিশেষ ভূমিকা থাকে। শবর রাজকন্যা ললিতার স্বজাতি হিসেবে তাঁরা দয়িতাপতি নামে পরিচিত। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার অসুস্থ পর্বে একমাত্র এই দয়িতাপতিদেরই সেবার অধিকার রয়েছে। বংশানুক্রমে নতুন দয়িতাপতি নিয়োগ এই সময়েই হয়ে থাকে। স্নানযাত্রার পরে ষষ্ঠী থেকে নতুন দয়িতাপতির নিয়োগ হয়। নবজাতকের ২১ দিন হলেই তারা সেবায়েত রূপে দীক্ষিত হবে। দয়িতাপতির পদ জন্ম থেকে সংরক্ষিত থাকে। দয়িতাপতি হিসেবে দীক্ষার পরে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে ভাতাও তারা একেবারে শিশু অবস্থাতেই পান। বড় হওয়ার পর বাকি সময় তাঁরা অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। কিন্তু, রথের সময় তাঁদের মন্দিরে উপস্থিত হতে হয়। সেই সময় তাঁদের প্রায় সারাক্ষণই কাটে মন্দিরে।
আরও পড়ুন- কখনও কম পড়ে না পুরীর মন্দিরের মহাপ্রসাদ, জানুন মন্দিরের এমনই কিছু বৈশিষ্ট্য
জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা সুস্থ হওয়ার পর তাঁদের নব যৌবন পর্ব শুরু হয়। তিনদিন ধরে চলে এই পর্ব। তবে এই সবই এখন ভক্তদের ছাড়াই করা হচ্ছে। আগামীকাল রথযাত্রার সময়ও ভক্তরা উপস্থিত থাকতে পারবেন না। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ রাত থেকেই মন্দির চত্বরে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। এছাড়া পুরী শহরে জারি রয়েছে কারফিউ।