সংক্ষিপ্ত

  • ১০৭৮ সালে জগন্নাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল
  •  ১১৭৪ সালে তা মেরামতির পর আজকের মন্দিরে পরিণত হয়
  • মন্দিরের প্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না
  • প্রতিদিন সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয় তবুও কম পড়ে না

পুরী মানেই সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল দিগন্ত বিস্তৃত উত্তাল সমুদ্র। আর পুরীর অন্যতম আকর্ষণ জগন্নাথ মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস ও রহস্য। কথিত আছে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে তাঁর চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মৃত্যুকালে পুরী ধামে ছিলেন। আর জগন্নাথদেব হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রূপ। সেখানেই ভগবান জগন্নাথ তাঁর দাদা বলরাম এবং ছোটো বোন সুভদ্রা বহু যুগ ধরে পূজিত হয়ে আসছেন। 

১০৭৮ সালে জগন্নাথ মন্দির তৈরি হয়েছিল। ১১৭৪ সালে তা মেরামতির পর আজকের জগন্নাথ মন্দিরর রূপ ধারণ করে। যদিও এখনকার মন্দিরের সঙ্গে পুরোনো মন্দিরের অনেক পার্থক্য রয়েছে। শুধু মূল মন্দিরটা তৈরি করেছিলেন ইন্দ্রদুম্ন। কিন্তু, পরে তৎকালীন সম্রাট ও শাসকদের নেতৃত্বে ক্রমে মেঘানন্দ পাচেরি, মুখশালা, নটমণ্ডপ যুক্ত হয়েছে। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে মন্দিরটি। বলা যায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পুরীকে আগলে রয়েছে এই মন্দির। মন্দিরের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য আছে যার সমাধান আজও বিজ্ঞান করতে পারেনি। 

পুরীর মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকাটি লাগানো রয়েছে, এটি সব সময় হওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে। পতাকাটি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয়। ঝড়-জল-বৃষ্টির মধ্যেও বদলানো হয় পতাকা। তবে মন্দিরের চূড়ায় ওঠার জন্য কোনও সিঁড়ি বা দড়ির সাহায্য নেওয়া হয় না। মন্দিরের গায়ে থাকা বিভিন্ন পাথরের উপর ভর করে উল্টো দিকে ফিরে যাঁরা পতাকা লাগান তাঁরা চূড়ায় উঠে যান। 

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারে প্রবেশ করার পর প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেই সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পাওয়া যায় না। আবার ঐ সিঁড়ি টপকে গেলে ফের সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।

পুরী মন্দিরের প্রতিদিন সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমাণ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ মানুষ সকলেরই পেট ভরে যায়। আর এই প্রসাদ কখনও কম পড়ে না। এমনকী, নষ্টও হয় না।

মন্দিরের রান্নাঘরটি বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর। ওই রান্নাঘরে ৫০০ জন রান্না করেন। এছাড়াও তাঁদের ৩০০জন সহকারীও সেখানে থাকেন। সবাই একসঙ্গে মহাপ্রসাদ রান্না করেন। আর সব রান্না করা হয় মাটির পাত্রে। 

মন্দিরের পুরোহিত থেকে শুরু করে রাঁধুনি কাউকে উপোস করতে হয় না। খেয়ে তারপর পুজো করেন পুরোহিত। বহু যুগ ধরে এই প্রথা মেনে আসছেন মন্দিরের সেবাইতরা। 

মন্দিরের রান্নাঘরে একটি পাত্রের উপর আর একটি পাত্র এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচের তারপরে। এভাবে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়। কথিত আছে জগন্নাথদেবের আশীর্বাদেই এমনটা হয়।

১২ বছর অন্তর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার নব কলেবর হয়। মূর্তিগুলি যে কাঠে নির্মিত হবে সেই গাছের কতগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন সেই গাছটি নিমগাছ হবে অথচ গাছের মধ্যে চন্দনের গন্ধ থাকবে। গাছের মধ্যে শঙ্খ, চক্র,গদা ও পদ্মের চিহ্ন থাকবে। আর গাছের উপর দিয়ে কোনওদিনও কোনও পাখি যাবেনা, গাছের উপর কোনও পশু বসবে না‌, গাছটি সাপেরা ঘিরে থাকবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ধরনের গাছের সন্ধান পাওয়া খুবই কঠিন। তবে বলা হয়,  প্রতিবারই স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে এরকম গাছের সন্ধান পান মুখ্য পুরোহিত।

মন্দিরটি এমনভাবে তৈরি যে এর ছায়া জমিকে স্পর্শ করে না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কখনও মন্দিরের ছায়া দেখতে পাওয়া যায় না।