মাঙ্গলিক পুজোর অনুষ্ঠানের জন্য ঋতুস্রাবের রক্ত নেওয়ার উদ্যোগ করেন ওই তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। রক্ত নেওয়ার জন্য তাঁর ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়।
২৭ বছর বয়সি বিবাহিত তরুণীর ঋতুস্রাবের রক্ত নিয়ে অঘোরী পুজোর জন্য বিক্রি করলেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রে বীর জেলায়। অকথ্য অত্যাচারের শিকার হয়ে শেষমেশ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তরুণী। লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তাঁর ঋতুস্রাবের রক্ত সংগ্রহ করার জন্য তাঁর ওপর ব্যাপকভাবে মারধর করেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। নানা ছুতোয় মানসিক এবং শারীরিক ভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে। বিশ্রান্তওয়াড়ি পুলিশ স্টেশনে এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেছেন অত্যাচারিতা। জানা গেছে, তাঁর ঋতুস্রাবের রক্ত শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বিক্রি করে লাভ করেছেন বিশাল অঙ্কের টাকা।
নিগৃহিতা জানিয়েছেন, ২০১৯ সাল থেকেই বিভিন্ন সময়, নানাভাবে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে এসেছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তাঁর অভিযোগ, ২০২২ সালে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা গণেশ উৎসবের সময় অঘোরী পুজোর জন্য জোর করে তাঁর ঋতুস্রাবের রক্ত নিয়ে নেয়। এই ঘটনার পরই সেই তরুণী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে পুনেতে নিজের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসেন। এরপরে পুলিশে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর ঋতুস্রাবের রক্ত বিক্রি করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকায়। ঘটনাটিতে বিশেষ নজর দিয়েছে রাজ্য মহিলা কমিশন। তরুণীর শ্বশুরবাড়ির সাত সদস্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ (অপ্রাকৃতিক অপরাধ), ৩৫৪(এ) (যৌন হেনস্থা), ৪৯৮(এ) (নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা), ৫০৪ (শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় জখম করা) ধারায় মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া আইপিসির ৩৪ ধারাতেও মামলা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্যের মানব বলিদানের নির্মূল এবং প্রতিরোধ আইন, অঘোরী অনুশীলন এবং কালো জাদু আইনের ধারাগুলিতেও মামলা করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্তা সাবইন্সপেক্টর শুভাঙ্গী মগদুম এই ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, 'মানসিক ও শারীরিক হয়রানির শিকার হওয়ায় নির্যাতিতা শ্বশুরবাড়ি ত্যাগ করে নিজের বাবা-মায়ের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। আমরা তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর দায়ের করেছি এবং সমস্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।' ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধান রূপালি চকনাকর বলেন, 'অভিযুক্তরা নির্যাতিতার ঋতুস্রাবের রক্ত নিয়েছে এবং অঘোরী পুজোর জন্য তা ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এটি একটি লজ্জাজনক ঘটনা, যা মানবতাকে কলঙ্কিত করে। এটা মর্মান্তিক যে, পুনের মতো প্রগতিশীল শহরে তরুণীরা এখনও এই ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এই ধরনের অপরাধ থেকে নারীদের রক্ষা করতে এবং সমাজে তাদের আরও শক্তিশালী করতে আরও সংগ্রাম প্রয়োজন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
আরও পড়ুন-
ডিএ-র দাবিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন কোচবিহার জেলায়, তালিকা তৈরি করে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার
সংসারে সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য গণেশের মূর্তি রাখেন অনেকেই, কিন্তু সিদ্ধিদাতাকে ঠিক কীভাবে রাখলে তবেই ফিরবে সৌভাগ্য?