
Karnataka Mob Lynching: প্রকাশ্যে পাকিস্তানের (Pakistan) পক্ষে স্লোগান দেওয়ায় এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। এই ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে। রবিবার এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। ম্যাঙ্গালুরুর কুডুপু অঞ্চলে ভাত্রা কাল্লুর্তি মন্দিরের কাছে স্থানীয় এক ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। সেই সময় ওই যুবক 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেয় বলে অভিযোগ। এরপরেই তাকে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে জনতা। পরে ঘটনাস্থল থেকে দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও অনেকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। শুরু হয়েছে তদন্ত। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর (G Parameshwara) জানিয়েছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর। তাঁরা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রবিবার স্থানীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এই টুর্নামেন্টে ১০টি দল ছিল। সব দল মিলিয়ে শতাধিক ক্রিকেটার ছিলেন। ভালোভাবেই খেলা চলছিল। বিকেল তিনটে নাগাদ হঠাৎ সচিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের বচসা শুরু হয়। তারপর বহু মানুষ মিলে ওই অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে। কয়েকজন মিলে গণপিটুনি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকে মিলে ওই যুবককে লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। কিল-চড়-লাথি-ঘুঁষিও চলতে থাকে। এরপরেই ওই অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের মৃত্যু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সচিন নামে ২৬ বছর বয়সি এই যুবকও আছেন।
কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘গণপিটুনির শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তিনি স্থানীয় ব্যক্তি না অন্য কোনও রাজ্য থেকে এসেছিলেন, সে বিষয়েও আমরা কিছু জানতে পারিনি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ম্যাচ চলাকালীন এই ব্যক্তি স্লোগান দিয়েছিলেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে মারতে শুরু করে জনতা। এই গণপিটুনির ঘটনা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। কোনও পরিস্থিতিতেই হিংসা মেনে নেওয়া যায় না। যদি কেউ আপত্তিকর কিছু বলেও থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারও নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। ঠিক কী হয়েছিল, কারা এই ঘটনার পিছনে, সে বিষয়ে আমরা এখনও পুরো খবর পাইনি। কোনও এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই ঘটনাকে যুক্ত করা উচিত নয়। সবার কাছে আমার আবেদন, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন। এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য আছে। এই সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’
ম্যাঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার অনুপম আগরওয়াল জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পুলিশকে খবর দেওয়া হয়, ভাত্রা কাল্লুর্তি মন্দিরের কাছে এক ব্যক্তির দেহ পড়ে আছে। এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশকর্মীরা। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে দেহে বড় কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ফলে পুলিশকর্মীদের মনে হচ্ছিল, স্বাভাবিকভাবেই এই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ম্যাঙ্গালুরুর গ্রামীণ থানাকে এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন এই যুবককে মারধর করা হয়। ওয়েনলক জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তে জানা যায়, শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ এবং পিঠে বারবার আঘাতের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তে আরও জানা গিয়েছে, মৃতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পিঠ ও কোমর, উরু, গোপনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁকে কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারা হয়। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে মারা হয়েছে। ম্যাঙ্গালুরুতে এর আগে আমরা এই ধরনের ঘটনা কখনও দেখিনি। এই ঘটনা এবারই প্রথম দেখা গেল। মৃতের শরীরে মারাত্মক আঘাত ছিল। ঠিক সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়নি। এই কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়।’ পুলিশের সন্দেহ অন্তত ২৫ জন মিলে এই যুবককে মারেন। ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।