সেনায় যোগ দেওয়াই ছিল জীবনের লক্ষ্য, ১২ বার ব্যর্থ হওয়ার পর হয়েছিল কর্নেল আশুতোষের স্বপ্নপূরণ

  • আনলাকি ১৩ ছিল কর্নেল আশুতোষের কাছে সবেচেয়ে লাকি নম্বর
  • ১২ বার চেষ্টা করে সেনায় যোগ দিতে ব্যর্থ হন তিনি
  • তবে বার বার ব্যর্থতাতেও লক্ষ্যপূরণ থেকে দূরে সরেননি কর্নেল আশুতোষ
  • ১৩ নম্বর প্রতেষ্টায় সফল হয়ে সুযোগ পান ভারতীয় সেনার অংশ হওয়ার

একদিকে দেশ লড়ছে করোনার মত মহামারীর সঙ্গে, আর অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে চিরাচরিত পথে হেঁটে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে ভারতে জঙ্গি ঠোকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশের মাটি রক্ষা করতে গিয়ে গত রবিবার শহিদ হয়েছেন চার ভারতীয় সেনা ও এক পুলিশ আধিকারিক। উত্তর কাশ্মীরে লস্কর ই তইবা জঙ্গির সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হওয়া জওয়ানদের কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। আর সকলের মুখে মুখে ঘুরছে কর্নেল আশুতোষ শর্মার নাম।

উত্তর কাশ্মীরে শনিবার রাতে জঙ্গিদের সাথে হওয়া এনকাউন্টারে শহিদ হওয়া পাঁচজন সেনার মধ্যে কর্নেল আশুতোষ শর্মাও ছিলেন। সেদিইন লক্ষ্যপূরণ করেই শহিদ হয়েছিলেন কর্নেল আশুতোষ । লস্কর ই তইবা জঙ্গি হায়দারকে মেরে তবেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

Latest Videos

আরও পড়ুন:রেকর্ড গড়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের শিকার ৩৯০০, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি

২১ নং রাষ্ট্রীয় রাইফেলের দ্বিতীয় কমান্ডিং অফিসার কর্নেল শর্মা ছিলেন এক পুরোদস্তুর দেশপ্রেমিক। একবার নয়, বীরত্বের জন্যে দু'বার সেনা মেডেল পেয়েছিলেন। সেনামহলে আড্ডায় অথবা ট্রেনিংয়ে বারবার তাঁর সাহসিকতাকে উদাহরণ ব্যবহার করা হত। শোনা যায়, কর্নেল আশুতোষের জীবনের এতটাই লক্ষ্য ছিল সেনা বাহিনীর অংশ হয়ে ওঠে। সেজন্য সাড়ে ছয় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। অবশেষে ১৩তম বারে সেনায় যোগ দাওয়ার সুযোগ পান তিনি।

সেনাবাহিনীর বহু গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের শরিক ছিলেন কর্নেল আশুতোষ। সেনাবাহিনী সূত্রে খবর, গত পাঁচ বছরে বহু এনকাউন্টার হয়েছে। কিন্তু আশুতোষ শর্মার মতো কর্নেল পদস্থ কোনও অফিসারে মৃত্যু হয়নি। শেষ ২০১৫ সালের একটি এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় কর্নেল এমএন রাই ও কর্নেল সন্তোষ মহাদিকের।  আশুতোষ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। বন্ধুদের মধ্যে তিনি প্রায়শই বলতেন তাঁর মূল লক্ষ্য লস্কর ই তইবা কমান্ডার হাইদারকে খতম করা। লক্ষ্যপূরণ হল প্রাণের বিনিময়ে।

উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও ১২ বছরের সন্তান এখনও সেই অঞ্চলেরই বাসিন্দা। একবার নয়, বীরত্বের জন্যে দু'বার সেনা মেডেল পেয়েছিলেন। সেনামহলে আড্ডায় অথবা ট্রেনিংয়ে বারবার তাঁর সাহসিকতার উদাহরণ ব্যবহার হত। কর্নেল শর্মার বাহিনীকে তাড়া করেছিল গ্রেনেড হাতে। তাঁকে নিঁখুত নিশানায় খতম করে বাহিনীর অন্যদের বাঁচান আশুতোষ শর্মা।

আরও পড়ুন: বোতলের জন্য লম্বা লাইন, সুযোগ বুঝে ৭০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দিল সরকার

জয়পুরে এক ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করা আশুতোষের দাদা পীযূষ জানান, শহিদ সেনা আধিকারিক যেটা মনে করবেন, সেটা করেই ছাড়তেন। তাঁর জীবলেন লক্ষ্য ছিল হয় করো, না হয় মরো। আশুতোষের এ কমাত্র স্বপ্ন ছিল সেনায় ভর্তি হওয়া। ১৩ বার চেষ্টা করার পর আশুতোষ সেনায় ভর্তি হওয়ার জন্য সফল হয়েছিলেন। এরপর থেকে তাঁকে আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি। কর্নেল শর্মা ২০০০ সালে ভারতীয় সেনায় যোগ দেন।

শেষবার ভাইয়ের সঙ্গে পীযূষের কথা হয় পয়লা মে, সেদিনও রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের প্রতিষ্ঠা দিবসের নানা গল্প দাদাকে শুনিয়েছিলন আশুতোষ। স্বামীর গর্বে গর্বিত শহিদ কর্নেল আশুতোষ শর্মার স্ত্রী পল্লবীও। হান্দওয়ারা এনকাউন্টারে যাওয়ার আগে পল্লবীর সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল কর্নেলের। জঙ্গিদের খতম করে তাড়াতাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন। পল্লবী বলেন, “মৃত্যুতে নয়, পরিবার মনে রাখবে তাঁর শৌর্য্যে, বীরত্বে, দেশের জন্য স্বার্থত্যাগে”

 

“উনি জানতেন আমি পরিবারকে সামলাতে পারব, তাই নিশ্চিন্তে নিজের কর্তব্যে যেতে পেরেছিলেন। পিছুটান থাকলে দুর্বল হয়ে পড়তেন। কর্তব্যের প্রতি তাঁর এই নিষ্ঠাকে আমি সম্মান করি”, চোখে জল নয় স্বামীর জন্য গর্ব অনুভব করছেন পল্লবী। বলেছেন, সেনার ইউনিফর্মকে শ্রদ্ধা করতেন কর্নেল। সন্ত্রাস দমন করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।  কাশ্মীরের যে কোনও বিপদসঙ্কুল স্থানে, জঙ্গিদমন অভিযানে নেতৃত্ব দিতে তাই কর্নেলেরই ডাক পড়ত। এই সাহস আর বীরত্বের জন্যই দু’বার ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সেনা বীরত্বের অন্যতম বড় সম্মান গ্যালান্ট্রি পেয়েছিলেন কর্নেল আশুতোষ।

কর্নেলের সঙ্গে  দুদিন আগে কথা হয়েছিল বৃদ্ধা মায়েরও। ফিরবেন বলেছিলেন কর্নেল। কথা রেখেছেন। ফিরছেনও নিজের বাড়িতে।  সোমবার রাতে জয়পুরে এসেছে কর্নেল আশুতোষের নিথর দেহ। এখানেই তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানান হয় সেনার তরফে। শহিদ কর্নেলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠোরও। 

 

 

উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের বাসিন্দা ছিলেন কর্নেল। তাঁর স্ত্রী ও ১২ বছরের সন্তান এখনও এই  অঞ্চলেরই বাসিন্দা। শর্মার পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদানের ঘোষণা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury