আলোচনার টেবিল ব্যর্থ হলে বিকল্প একমাত্র সেনা, সীমান্ত নিয়ে চিনকে ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারি বিপিন রাওয়াতের

  • লাগাতার চিনের সাথে সীমান্ত  বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করছে ভারত
  • কিন্তু সামরিক ও কূটনৈতিক বৈঠকে এখনও সমাধান অধরা
  • পূর্ব লাদাখের পুরোনো অবস্থান থেকে সরেনি চিনা সেনা
  • এই প্রেক্ষিতেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য দেশের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের

Asianet News Bangla | Published : Aug 24, 2020 7:18 AM IST / Updated: Aug 24 2020, 12:51 PM IST

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় গত ১৫ জুন চিনের লোলফৌজের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল ভারতীয় সেনা। যাতে শহিদ হতে হয় দেশের ২০ জন সেনা জওয়ানকে। এরপর থেকেই  ভারত লাগাতার চিনের সাথে সীমান্ত নিয়ে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করে চলেছে। কখনও দুই দেশ বসছে সামরিক বৈঠকে, কখনও আবার কূটনৈতিক বৈঠকে। এরই মাঝে নয়া চাল দিতে শুরু করেছে বেজিং। ভারতকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও  আদপে কিন্তু লালফৌজ যে অবস্থানে ছিল, সেখানেই রয়েছে। চিনা সেনার অবস্থান নিয়ে বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে ভারত। তবে তাতে কর্ণপাত করেনি চিন।

দুই দেশের মধ্যে বৈঠক চললেও এখনও ইতিবাচক কোনও সুরাহা বের হয়নি। পূর্ব লাদাখের পুরোনো অবস্থান থেকে সরেনি চিনা সেনা। আর এই প্রেক্ষিতেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত। চিনকে স্পষ্টত হুঁশিয়ারি দিয়ে রাওয়াত বলেন, লাদাখে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির স্বভাবে পরিব্রতন না হলে আমাদের কাছে সেনা অভিযানের বিকল্প আছে।

আরও পড়ুন: ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও চিনের প্রভাব খাটানোর চক্রান্ত ফাঁস, বেজিংকে আটকাতে কড়াকড়ি ভিসা নীতিতে

সোমবার  রাওয়াত দাবি করেন কূটনৈতিক স্তরে ও সামরিক স্তরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই এখনও পর্যন্ত তেমন ফল আসেনি। ষষ্ঠ দফার বৈঠকের পরেও সমাধানসূত্র অধরা ভারতের কাছে। ফলে এবার অন্য পথেও হাঁটতে পারে ভারতীয় সেনা।  তেমনই ইঙ্গিত দিলেন দেশের প্রাক্তন সেনা প্রধান। এদিন সিডিএস বলেন, যদি বৈঠকের ফলই ব্যর্থ হয়, তবে অন্য রাস্তাও খোলা রয়েছে চিনা সেনার আগ্রাসনের জবাব দিতে।

এলএসি-তে  ভারত সরকার প্রথম থেকেই চিনের সাথে কথাবার্তার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষের একাধিক বৈঠক হওয়ার পরেও সমস্যার সমাধান হয় নি। ভারতের তরফ থেকে আগেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, চিনের যেকোন দুঃসাহসের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। এনিয়ে লাদাখে দাঁড়িয়ে আগেই চিনের নাম না করে  হুঙ্কারও দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সোমবার রাওয়াত বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আর রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার সাথে জড়িত বড় বড় অফিসাররা সমস্ত রকম বিকল্পের সমীক্ষা করছেন।

আরও পড়ুন: কাঠমাণ্ডুতে বেজিংয়ের টোপ হোউ ওয়াংকি, এই সুন্দরীর উস্কানিতেই বেসুরো গাইছে ভারত বন্ধু নেপাল

তবে, এই মুহূর্তে ভারত এবং চিনের আলোচনা কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি সেনা সর্বাধিনায়ক। চিনের সেনার সাথে ডোকালামে ২০১৭ সালে ৭৩ দিন পর্যন্ত চলা বিবাদের সময় ভারতের সেনা প্রধান ছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তবে ডোকালাম আর লাদাখ দুটোর পরিস্থিতি ভিন্ন। ডোকালামের থেকে অনেক বেশি উত্তেজক লাদাখের পরিস্থিতি। আর  ভারত কোনমতেই লাদাখ থেকে পিছু হটবে না তা আগেই  স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। চীনকে কড়া বার্তা দিতে লাদাখে হাজার হাজার সেনার সাথে আধুনিক সামরিক অস্ত্র, ট্যাঙ্ক  এবং যুদ্ধ বিমানও মোতায়েন করেছে ভারত।

এদিকে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে, প্যাংগং লেকের  ধারে ৫ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্ট পর্যন্ত মজবুত ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে চিন। সেখান থেকে সেনা সরার নামগন্ধ নেই। জুলাইয়ের শেষে পাওয়া উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে এই ছবিটাই সামনে এসেছে। দেখা গিয়েছে, প্যাংগংয়ের ৫ ও ৬ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে চিন। একইসঙ্গে স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে সেখানে। শুধু তাই নয়, উপগ্রহ ছবি বলছে, ওই এলাকায় সেনা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে চিনারা। 

আসলে চিনের দাবি, তারা প্যাংগংয়ে, দেপসাংয়ে এখনও যতটা ঢুকে বসে রয়েছে সেটাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। এর আগে একাধিক দফার আলোচনায় ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, চিনাদের নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে হবে এবং এপ্রিল মাসের স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে। তাই  দুই দেশের সেনাই সঠিক পরিমাণে পিছনে সরুক,  চিনের এই দাবি কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, তিন সেনার প্রধান এমএম নারাভানে, অ্যাডমিরাল করমবীর সিং ও এয়ার চিফ মার্শাল বি কে এস বাদুরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দু ঘন্টা ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়  সেদিন। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহেই সেনা প্রধান নারাভানে সেনাবাহিনীর সাতজন শীর্ষ কমান্ডারদের নিয়ে বৈঠক করেন। খতিয়ে দেখেন নর্দার্ন ও ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের প্রস্তুতি। চিনা বায়ুসেনার সাতটি ঘাঁটির ওপর কড়া নজর রেখেছে ভারতীয় সেনা। নিরাপত্তা আধিকারিকরা জানাচ্ছেন চিনা বায়ুসেনার প্রতিটি মুভমেন্ট নজরে রাখা হয়েছে।

এদিকে গোয়েন্দা সূত্রে খবর, একের পর এক এলাকায় সেনা সাজাচ্ছে চিন।কখনও উত্তরাখন্ড, কখনও অরুণাচল প্রদেশ, আবার কখনও পূর্ব লাদাখ। ভারতীয় সীমান্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনধিকার প্রবেশের মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিনের লালফৌজ।

Share this article
click me!