আহমেদ নগরের বাসিন্দা ছিল সরস্বতীরা। অভাবের সংসার। কিন্তু পরিবারের সুখটুকুও চলে যায় মায়ের অকাল মৃত্যুর পরে।
সরস্বতী বৈদ্যকে খুন করে তার দেহ টুকরো টুকরো কেটে প্রেসার কুকারে সেদ্ধ করে রাস্তার কুকুরদের খাইয়ে দিয়েছিল তারই প্রেমিক মনোজ সানে। কিন্তু কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড। মনোজ সানেকে গ্রেফতার ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পরে রহস্যের জট খুলতে পেরেছে বলে কিছুটা বলেও মনে করছে মুম্বই পুলিশ। কারণ সরস্বতীর কোনও আত্মীয়ের খোঁজ বুধবার রাত থেকে পায়নি পুলিশ। অবশেষে তাঁর নিত বোনের সন্ধান পেয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই রহস্যের কিনারা করতে পেরেছে বলেও দাবি সূত্রের। তবে বোনেদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আরও কঠিন আর মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে তদন্তকারীদের।
সরস্বতীর বাবা অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পরে মা আর তিন বোনের সঙ্গেই থাকত সরস্বতী। আহমেদ নগরের বাসিন্দা ছিল সরস্বতীরা। অভাবের সংসার। কিন্তু পরিবারের সুখটুকুও চলে যায় মায়ের অকাল মৃত্যুর পরে। তারপর সরস্বতী আর তার তিন বোনকে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই বড় হয় সরস্বতীরা। কঠিন আর কঠোর জীবন সরস্বতীদের। সেখান থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখতে সরস্বতী।
জানকী বাই অনাথ আশ্রমে প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিল সরস্বতী। ১০ বছরেও বেশি সময় আশ্রমেই কেটেছে। ১৮ বছর হলে সরস্বতী আশ্রম ছেড়ে দেয়। তার বোনেদের সঙ্গে আওরঙ্গাবাদে থাকতে শুরু করে। সেখান থেকেই সে মুম্বইয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। শেষপর্যন্ত বোরিভালির একটি রেশন দোকানে কাজ নেয় সরস্বতী। সেখানেই আলাপ হয় মনোজের সঙ্গে। তারপরই ৫৬ বছরের মনোজের সঙ্গে ৩২ বছরের সরস্বতীর বন্ধুত্ব গভীর হয়। প্রেমে পরিণিত হয়। কঠিন জীবন থেকে মুক্তি আর একটি সন্তানের স্বপ্নে বিভোর সরস্বতী অন্যকিছু না ভেবেই মনোজের সঙ্গে ঘর বাঁধে।
সরস্বতীর তিন বোনের দাবি মনোজের সঙ্গে তাদের বোন একটি মন্দিরে বিয়ে করেছিল। কিন্তু দুজনের বয়সের পার্থক্যের কারণে সরস্বতী তাদের বিয়ের কথা কাউকে জানায়নি। অন্যান্য লোকের কাছে মনোজকে মামা বলে পরিচয় দিত। অন্যদিকে মনোজ যে বিবাহিত তাও জানত না সরস্বতী। মনোজ নিজেকে একটি কাপড় কলের মালিক বলেও পরিচয় দিত। তারা একাধিকবার যে আশ্রমে বড় হয়েছিল সেখানে গিয়েছিল। শেষবার গিয়েছিল বছর দুয়েক আগে। করোনাকাল থেকেই সরস্বতী বোনেদের কথা অগ্রাহ্য করে মনোজের সঙ্গে থানেতে থাকতে শুরু করে।
তিন বছর আগে মীরা রোডের ফ্ল্যাটে চলে আসে সরস্বতী আর মনোজ। কিন্তু সংসারের স্বপ্নে বিভোর সরস্বতীর জীবনে আবারও নেমে আসে কালো ছায়া। মনোজের সঙ্গে আশান্তি শুরু হয়। পুলিশের অনুমান মৃত্যুর আগে সরস্বতী আর মনোজের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। তাতেই রাগের মাথায় মনোজ খুন করেছিল সরস্বতীকে। তারপর রীতিমত পরিকল্পনা করে সরস্বতীর দেহ লোপাট করার ফন্দি আঁটে। যাইহোক এখনও মনোজ খুনের কথা স্বীকার করেনি। সে বলেছে সরস্বতী বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ
coal mine disaster: ধানবাদের অবৈধ কয়লাখনিতে ভয়ঙ্কর ধস, শিশু -সহ মৃত তিন - আটকে বহু