সরকারি স্কুলগুলোতে আরও উন্নত করতে হবে। স্কুলের পরিকাঠামোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সেই জন্য প্রয়োজন বেসরকারী সাহায্যের। মন কি বাত অনুষ্ঠানে এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে বিদ্যাঞ্জলী অভিযানের কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুরু করবেন স্কুল স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রাম।
২০২২-এর প্রথম মন কি বাত (Maan Ki Baat) অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বিদ্যাঞ্জলী (Vidhyanjali Abhijan) অভিযান নিয়ে কথা বলেন, তিনি জানান কেন্দ্রীয় সরকার এই ধরনের প্রকল্প শুরু করেছে শিক্ষাক্ষেত্রে সকলের যোগদানকে গুরুত্ব সহকারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য, কী এই বিদ্যাঞ্জলী (Vidhyanjali Abhijan) অভিযান, কবে শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প, কীভাবে কাজ করে এই প্রকল্প- চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত। বিদ্যাঞ্জলী (Vidhyanjali Abhijan)অভিযান হল ভারতের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের (Ministry of Human Resource Development of India) তরফে আয়োজিত স্কুল স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রাম (Volunteer Programme)। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সরকারি স্কুলগুলোতে (Government School) বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে (Private Involbment) বাড়ানোর জন্য ও কমিউনিটি বুস্ট (Community Boost) আপ করার লক্ষ্যেই স্মৃতি ইরানি এই বিশেষ বিদ্যাঞ্জলী অভিযান শুরু করলেন। এই বিদ্যাঞ্জলী (Vidhyanjali Abhijan) অভিযানের অধীনে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের জন্য নআরআই, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, সরকারী কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা কর্মী, পেশাদাররা সহ স্বেচ্ছাসেবকরা সহ-পাঠ্যমূলক কার্যক্রমের পরিষেবা প্রদান করবে।
স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে চালু করা প্রকল্পের নামই হল বিদ্যাঞ্জলী অভিযান। এই প্রোগ্রামটি কার্যকরী হবে ১৯ টি রাজ্য এবং ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। সেই তালিকায় রয়েছে আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, গোয়া, জম্মু ও কাশ্মীর, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, ওড়িশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তর প্রদেশ। বিদ্যাঞ্জলি কথার অর্থ হল, বিদ্যা শব্দটি হল সংমিশ্রণ যার অর্থ "সঠিক জ্ঞান" বা "স্বচ্ছতা" এবং অঞ্জলি যার অর্থ সংস্কৃত ভাষায় "দুই হাতে জোড় করো অর্পণ করা"। ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয় দ্বারা গৃহীত একটি উদ্যোগ হল বিদ্যাঞ্জলী। গোটা দেশ জুড়ে সরকারি স্কুলগুলিতে কমিউনিটি বুস্ট আপ করার জন্য এবং বেসরকারি খাতের সংযোগ বাড়িয়ে স্কুলগুলোকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে স্কুলগুলোকে বিভিন্ন প্রবাসী ভারতীদের মধ্যে যে স্বেচ্ছাসেবদের সঙ্গে, তরুণ পেশাদার থেকে স্কুল প্রাক্তন ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সঙ্গে যুক্ত করবে। বিদ্যাঞ্জলী প্রকল্পকে দুটচি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে একটিতে সুলের বিভিন্ন কাজকর্মে অংশ করা এবং অন্যটি হল স্কুলের সম্পদ, সরঞ্জাম যেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকরা সরকার এবং সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে সমর্থন এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারবে।
আরও পড়ুন-আর্জেন্টিনার হস্তিনাপুর ফাউন্ডেশনের নেপথ্যে রয়েছেন এই বিদেশিনি, Maan Ki Baat-এ মোদীই করালেন পরিচয়
আরও পড়ুন-Maan Ki Baat: অসম সরকারের উদ্যোগে কমেছে এক শৃঙ্গ গণ্ডারের হত্যা, প্রশংসা প্রধানমন্ত্রীর
আরও পড়ুন-Maan Ki Baat : শীঘ্রই উন্নতমানের ফুটবল স্টেডিয়াম পাচ্ছে লাদাখ, খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্প নিয়ে বড় ঘোষণা মোদীর
এই বিদ্যাঞ্জলী প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে কী ধরনের উন্নতি হওয়ার আশা রয়েছে দেখুন।
১. এই প্রকল্পের হাত ধরে যে কোন বিদেশী প্রতিষ্ঠান ভারতে তাদের ক্যাম্পাস তৈরি করতে পারবে।
২. সরকারি স্কুলগুলোতে পড়াশুনার মানকে আরও উন্নত করার জন্য বেসরকারি ক্ষেত্র ও কমিউনিটি থেকে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
৩. বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রাইমারি বা প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্র ও সেকেন্ডারি স্কুলগুলোতে স্বেচ্ছায় আর্থিক বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান করা হবে যাতে সেই টাকায় স্কুলগুলোর পরিকাঠামোকে সুন্দর করে ঢেলে সাজানো যায়।
বিদ্যাঞ্জলী প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী এবার সেটা জেনে নেওয়া যাক।
উদ্দেশ্য
১.এমন কিছু মানুষকে একত্রিত করা যারা সত্যিই স্কুলের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতে আগ্রহী। স্বেচ্ছাসেবকরা একাধারে পরামর্শদাতা, আস্থাভাজন এবং শিশুদের সাথে যোগাযোগকারী হিসাবে কাজ করবেন।
২. অনেক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা অনেক কম। সেই দিকটি ভাল করে বিচার বিবেচনা করে স্বেচ্ছাসেবকরাই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে বিদ্যাঞ্জলী অভিযানের নিয়ম মেনেই শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
বিদ্যাঞ্জলী অভিযানের ক্ষেত্রে যোগ্যতা সংক্রান্তও কিছু বিষয় রয়েছে। সেগুলো কী জেনে নেওয়া যাক।
যোগ্যতা
১. বিদ্যাঞ্জলী অভিযানে অংশ গ্রহণের জন্য কোনও রকম এন্টার্স টেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। একজন ভারতীয় হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত কোনও ব্যাক্তি, কোনও সরকারি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত আর্মি বা কোনও হোমমেকার, যেই হোক না কেন কোনও রকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দরকার নেই।
২. পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও একজন হোম মেকারকে অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে হবে।
৩.একজন প্রবাসী ভারতীয়কে অবশ্যই ওভারসীস সিটিজেনশিপ অফ ইন্ডিয়া বা OCI করতে হবে।
৪. যাঁরা কখনও সরকারি চাকরি করেন নি তাঁদেরকে অবশ্যই গ্র্যজুয়েট হতে হবে।
বিদ্যাঞ্জলী অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন জেনে নিন।
নির্বাচন পদ্ধতি
যারা বিদ্যাঞ্জলী অভিযান প্রকল্পে সমস্ত শর্ত মেনে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতে চান তাঁরা সরকারি পোর্টাল https://secure.mygov.in/task/vidyanjali-school-volunteer-programme-এ গিয়ে আবেদন করুন। ব্লক এডুকেশন অফিসাররা স্বেচ্ছাসেবকদের আবেদন যাচাই করার দায়িত্বে থাকবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের সমস্ত তথ্য যথাযথভাবে ফিলআপ করতে হবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের থেকে অনুমতি পেলে ২ সপ্তাহের জন্য পাইলট পিরিয়ড সার্ভ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী দিনে কাজের সময়সীমা বাড়াতে সেই স্বেচ্ছাসেবককে আরও একটি অ্যাপলিকেশন করতে হবে।
ফলাফল
যে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকরা গান বা মিউজিক, নাচের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁরা শিশুদের মধ্যে থেকেও তাদের ট্যালেন্টকে চিহ্নিত করে তাকে বিকাশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে সক্ষম হবে। সেটাই হবে একজন সেরা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ। স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করলে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন এই কাজের জন্য কিন্তু সরকারের তরফে কোনও নিয়োগপত্র বা বেতন পাওয়া যাবে না।