
Pahalgam Terrorist Attack: খাবার দোকানে ওত পেতে ছিল জঙ্গিরা। পর্যটকদের সেখানে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল তারা। পর্যটকরা খেতে যেতেই তারা সক্রিয় হয়। আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে। তারপর পর্যটকরা হিন্দু জানতে পেরেই গুলি চালাতে শুরু করে। পহেলগাঁওয়ে (Pahalgam) জঙ্গি হামলার পর জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (National Investigation Agency) তদন্তে এই তথ্য উঠে এসেছে। নিহত পর্যটকদের পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন, খাবার দোকানের আড়ালে পর্যটকদের যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল দুই জঙ্গি। পর্যটকরা খেতে যেতেই তাঁদের সামনে এসে দাঁড়ায় সাক্ষাৎ মৃত্যু। গুলি চালানোর আগে তাড়াহুড়ো করেনি জঙ্গিরা। তারা ধর্মের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর হত্যালীলা শুরু করে। খাবার দোকানে যাওয়া চারজন পর্যটককে প্রথমে গুলি করে মারে জঙ্গিরা। তারপর আরও ২২ জনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারপর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ। এনআইএ তদন্ত চলছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে। কিন্তু যে জঙ্গিরা এভাবে হামলা চালিয়ে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিল, তাদের এখনও গ্রেফতার করা বা গুলি করে মারা সম্ভব হয়নি। জঙ্গিরা ভারতেই কোথাও লুকিয়ে আছে না পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছে, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি। কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। বেশ কয়েকজন জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সারা দেশ চাইছে, এই হামলার সঙ্গে যে জঙ্গিরা জড়িত, তাদের খতম করা হোক। সেই সাফল্য এখনও পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানে কোনও অভিযানের খবরও পাওয়া যায়নি। সারা দেশ অপেক্ষায়।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা অতর্কিতে ছিল না। জঙ্গিরা রীতিমতো পরিকল্পনা করে, খোঁজখবর নিয়ে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে হামলা চালায়। তদন্তে এমনই জানতে পেরেছে এনআইএ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের ধর্মের বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে গুলি চালায়নি জঙ্গিরা। তারা বেশ কিছুদিন ধরেই পহেলগাঁওয়ে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। বিভিন্ন হোটেলে নজরদারি চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তারপর বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নির্দিষ্ট দিনে সেখানে পৌঁছে পর্যটকদের পথ আটকে একে একে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি চালায় জঙ্গিরা।
জঙ্গিরা যখন পহেলগাঁওয়ে হামলা চালায়, সেই মুহূর্তেও জিপলাইনের রোমাঞ্চ উপভোগ করছিলেন পর্যটকরা। এমনই এক পর্যটকের তোলা ভিডিওতে জঙ্গিদের তাণ্ডবের দৃশ্য ধরা পড়েছে। জিপলাইনের এক অপারেটরের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। এই জিপলাইন অপারেটরের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁকে তলব করেছে এনআইএ, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পিছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, আইএসআই, লস্কর-ই-তইবা জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে একইসঙ্গে সন্দেহ করা হচ্ছে, কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দারাও জঙ্গিদের হামলা চালাতে সাহায্য করছে এবং লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করছেন তদন্তকারীরা। তাদের কাছ থেকে জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে ত্রালের কাছে জঙ্গলে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার খবর পায় সেনাবাহিনী। এই খবর পাওয়ার পরেই কাশ্মীর পুলিশের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলির লড়াই চলছে। ত্রালের পাশাপাশি সোপিয়ান, পুলওয়ামাতেও জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলির লড়াই চলছে। উপত্যকাজুড়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালানো জঙ্গিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখন সেটাই নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান লক্ষ্য। এই কারণে উপত্যকার সর্বত্র তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জঙ্গিদের খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।