
শ্রীনগরে ভারতের রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর একটি বাসে বড় সড় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরদিনই জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu And Kashmir) সন্ত্রাস দমনে বড় সাফল্য পেল নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার পুঞ্চ সেক্টরে (Poonch Sector) নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে খতম হল কুখ্যাত পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী আবু জারার (Abu Zarar)। তার উপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বড় মাপের হামলা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এই ভাবে তাকে কাজে লাগিয়ে পুঞ্চ-রাজৌরি (Poonch-Rajouri) অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার চক্রান্তে কষা হয়েছিল সীমান্তের ওইপার থেকে। জারারের মৃত্যুতে সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হল।
জানা গিয়েছে আবু জারার, একজন পাকিস্তানি (Pakistani) নাগরিক। চলতি বছরের অগাস্টে তাঁকে প্রথম পুঞ্চ জেলায় (Poonch Sector) দেখা গিয়েছিল। এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, এদিন, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর এক 'ক্লিনিকাল অপারেশনে' তাকে খতম করে। এটা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য। কারণ নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ চালানো ছাড়াও পীর পঞ্জল অঞ্চলের (Pir Panjal) দক্ষিণে সন্ত্রাসবাদকে ফের জাগিয়ে তোলার কাজে যুক্ত ছিল সে। স্থানীয় যুবকদের জঙ্গি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে।
নিরাপত্তা সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া, এদিনের ক্লিনিকাল অপারেশন সম্ভব হত না। গত অগাস্টে পুঞ্চ সেক্টরে আবু জারারকে দেখার পর থেকেই তাঁকে ধরার বা খতম করার চেষ্টায় ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। গত কয়েক মাস ধরে সে তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে গিয়ে, গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু তাদের খাদ্য, বস্ত্র এবং সীমান্তের ওইপাড়ে জঙ্গি মাথাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজন তাদের বসতি অঞ্চলে আসতেই হয়েছিল। ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনা, এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে তার গতিবিধির উপর নজর রাখছিল। একদিকে, প্রায় রিয়েল-টাইমে তার মোবাইল যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল, অন্যদিকে, স্থানীয়রাও তাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছিলেন।
এর ফলে কোণঠাসা হতে হতে প্রবল শীতের মধ্যেও তারা পীর পঞ্জল রেঞ্জের উচ্চ অংশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। একবার সন্ত্রাসবাদীরা অসামরিক জনবহুল এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে সরে যাওয়ার পরই ক্লিনিকাল অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এদিন, বেহরামগালা (Behramgala) এলাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে। জারার ও তার সঙ্গীরা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পাল্টা গুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের খতম করা হয়। তবে, জারার-এর এক সহযোগী পালাতে পেরেছে।
ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, চারটি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন, একটি গ্রেনেড এবং কিছু ভারতীয় মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জঙ্গিদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র থেকে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। আবু জারারকে নিয়ে এই পর্যন্ত এই বছর পুঞ্চ-রাজৌরি বেল্টে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আটজন বড় মাপের জঙ্গি নেতাকে খতম করা হল। গত মাসেই, নিরাপত্তা বাহিনী এই এলাকার 'সন্ত্রাসবাদীদের গাইড' হাজি আরিফকে (Haji Arif) খতম করেছিল। আরিফ, পাক জঙ্গিদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশে সাহায্য করত।