
Pegasus Case: ইজরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যারের (Pegasus spyware) মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের উপর নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে কোনও ভুল দেখছে না সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court of India)। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চে এদিন ২০২১ সালে দায়ের হওয়া রিট পিটিশনের শুনানি ছিল। এই রিট পিটিশনে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আন্দোলনকারীদের উপর নজরদারির অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যদি কারও উপর নজরদারি চালানো হয়, তাহলে তাতে কোনও ভুল নেই। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা যাবে না। তবে কীভাবে এবং কার উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। ফলে নীতিগতভাবে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত শক্ত করল সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান মজবুত করল।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী দীনেশ দ্বিবেদী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইজরায়েলের কাছ থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে কি না এবং ব্যবহার করেছে কি না, সেই প্রশ্নই আসল। এরপর বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘দেশে যদি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভুল বা সমস্যা কোথায়? সরকার যদি স্পাইওয়্যার কেনে, তাহলে কোনও ভুল নেই। কাদের বিরুদ্ধে এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন। আমরা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আপস করতে পারি না। জাতীয় নিরাপত্তা বিসর্জনও দেওয়া যায় না।’ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, 'জঙ্গিরা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দাবি জানাতে পারে না।' এরপর বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার আছে। সংবিধান অনুসারে তাঁদের সেই গোপনীয়তা সংরক্ষণ করা হবে।’
পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে আর্জি জানানো হয়েছিল, তার পক্ষে সওয়াল করেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও গ্রুপ পেগাসাস ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারতেও পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে। জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে বিস্তারিত রায় দিয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত করার জন্য বিচারপতি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে এক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিচারপতি আরও বলেন, পেগাসাস স্পাইওয়্যারের অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে বিশেষজ্ঞ কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা প্রকাশ করা যাবে না। কারণ, সেক্ষেত্রে রাস্তায় আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হবে। ‘ব্যক্তিগত সমস্যা বা আপত্তির বিষয় অবশ্যই বিচার করতে হবে। কিন্তু রাস্তায় আলোচনার জন্য বিষয়বস্তু তৈরি করা যাবে না।’
২০১৭ সালে ভারত-ইজরায়েল প্রতিরক্ষা চুক্তির অঙ্গ হিসেবে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনা হয় বলে অভিযোগ। ২০২১ সালে এ কথা জানা যায়। ভারতে ৩০০ মোবাইল ফোন নাম্বারে নজরদারি চালানো হয় বলে অভিযোগ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম প্রথমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারপর ভারতে হইচই শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন বিচারপতি এমএল শর্মা। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে ভারত ও ইজরায়েলের মধ্যে যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছিল, তা সংসদে অনুমোদন করা হয়নি। এই কারণে প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করা জরুরি। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টকে একটি ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করার জন্য উপযুক্ত নির্দেশ জারি করার এবং বিচারের স্বার্থে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনা সংক্রান্ত চুক্তি এবং জনসাধারণের অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ারও আর্জি জানান আইনজীবী শর্মা। সুপ্রিম কোর্ট এই আর্জি খতিয়ে দেখছে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।