
'মানব সেবা ভারতের প্রথম অগ্রাধিকার।' ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্ক আর সিরিয়া থেকে ফেরা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তেমনই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে কথোপকথনের একটি ভিডিও ক্লিপ শেযার করেছে। শিরোনামে লিখেছেন, ' যারা অপারেশন দোস্তের অংশ তাদের সঙ্গে এই কথোপকথন আমি সারা জীবন মনে রাখব। 'এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়েই বিপর্যস্ত দেশগুলির পাশে দাঁড়াতে ভারত যে তৈরি তাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। গতকাল এই অনুষ্ঠানে অপারেশন দোস্তের সদস্যদের তুরস্ক ও সিরিয়াতে কাজের অভিজ্ঞতার কথাও শোনেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি খোঁজ খবর নেন ভারতীয় ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারমেয়দের। এনডিআরএফ দলের সদস্যদের পরিবারের থেকে দূরে থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন। কথা প্রসঙ্গে অনেকেই জানিয়েছিলেন, এই প্রথম তাঁদের পাসপোর্ট তৈরি হল। আগামী দিনে এজাতীয় কাজে যে অপারেশন দোস্ত পিছিয়ে থাকবে না তারও ইঙ্গিত দিয়েছে এনডিআরএফ সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথোপকথনের সময় এনডিআরএফ -র একজন কমান্ডিং অফিসার বলেন, 'যখন উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের তদরকি করছিলাম তখন একজন রোগীর আত্মীয় আমার হাত দুটি জড়িয়ে ধরেছিল। তারপর চোখের কাছে নিয়ে যায়। তারপর চুমু খায়। সে বলে তুমি আমার কাছে বাবার মতই। ' কমান্ডিং অফিয়ার আরও জানিয়েছেন, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মানুষরা তাদের বলেছে , ভারতের এই সহযোগিতা তাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
এক মহিলা অফিসার তুরস্ক গিয়েছিলেন। মোদীর সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন,'অসহায় এক মহিলা আমাকে বলেছিলেন, আমার জন্য ঈশ্বর প্রথম আর আপনি দ্বিতীয়। '
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অধিকারিকরা জানিয়েছে তুরস্ক আর সিরিয়াতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডগ স্কোয়াড দুর্দান্ত কাজ করেছে। প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করেও সারমেয়গুলি সুস্থ রয়েছে। এনডিআরএফ-এর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারমেয় জুলি কীভাবে ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করতে সহযোগিতা করেছে তারও বিস্তারিত বর্ণনা দেন এক আধিকারিক। আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রথমে জুলি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে প্রাণ খুঁজে পায়। তারপর তা নিশ্চিত করার জন্য পাঠান হয়েছিল অপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারমেয় রোমিওকে। জুলি আর রোমিও-র বার্তা পাওয়ার পর ভারতী বাহিনীর জওয়ানরা উদ্ধারকাজ শুরু করে। আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ৮০-১৪০ ঘণ্টা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে একটি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও তিনি মোদীর সঙ্গে শেয়ার করেন।
বিমান বাহিনীর এক আধিকারিক বলেছেন, 'ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্যরা যেখানেই যায় সেখানেই যথেষ্ট সাড়া পায়। বিপর্যস্ত দেশের মানুষের মনে আশার আলো দেখায় ভারতীয় বিমান বাহিনী। ' তিনি আরও বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী সম্পর্কে এটা ব্যপকভাবে প্রচারিত যে বিশ্বে যাই ঘটুক না কেন ভারত দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের সাহায্য ও সমর্থন করতে ছুটে যায়।
অপারেশন দোস্তের অধীনে থাকা ভারতীয় সেনা বাহিনীর মেডিক্যাল টিম সোমবার গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানবন্দরে নেমেছে। ১২ দিন পরে তারা ফিরে আসে।কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তুরস্কে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিয়ে গেছে তারা।