করোনা মহামারীর ঢেউ সারা বিশ্বের মত আছড়ে পড়েছে ভারতেও। দেশে ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিশ্বের প্রথম ১০টি করোনা আক্রান্ত দেশের মধ্যে উঠে এসেছে ভারতের নামও। এই আবহেই এক বছরের মেয়াদ পূর্ণ হল দ্বিতীয় মোদী সরকারের। মহামারির আতঙ্কে জনসমাগম চলবে না। তাই দেশবাসীকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, দেশ বিগত এক বছরে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন , করোনা ভাইরাসের চরম সংকটকালীন মূহূর্তে ‘মারাত্মক দুর্দশা’য় ভুগেছেন দেশের পরিযায়ী শ্রমিকেরা। তবে তিনি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন ভারত অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে লিখেছেন, এমনিতে তিনি মানুষের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করেন৷ কিন্তু করোনা ভাইরাস ও দেশজুড়ে লকডাউনের জেরে চিঠি লেখ ছাড়া উপায় নেই৷ মোদীর কথায়, 'কেন্দ্রের গত এক বছরে কিছু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের জেরে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে৷ বহু চ্যালেঞ্জ, কঠিন পরিস্থিতি রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ভারত এগিয়ে চলেছে৷'
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জানিয়েছেন, 'আমি দিন-রাত কাজ করি৷ আমার মধ্যে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশের কোনও ঘাটতি নেই৷ আমার আপনাদের উপর বিশ্বাস আছে, আপনাদের ক্ষমতা ও যোগ্যতা আমার চেয়ে অনেক বেশি৷'
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই সংকটে কারোর অসুবিধা হয়নি, একথা কোনও ভাবেই বলা যায় না। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ” আমাদের শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, ছোট শিল্পের কারিগর এবং কারিগররা, হকাররা প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করেছেন।”
পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী উল্লেখ করেছেন, “যে অসুবিধাগুলি হচ্ছে তা যেন বিপর্যয়ের রূপ না নেয়, তা আমাদের দেখতে হবে। চাকরি হারিয়ে, নিঃস্ব হয়ে মার্চের শেষ থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে হাজার হাজার রাস্তা অতিক্রম করেছে, যা মার্চের শেষ থেকে চলা লকডাউনের চেনা ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোদীর কথায়, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে গোটা বিশ্ব একজোট হয়ে কাজ করছে৷ তারই মধ্যে আর্থিক সংস্কারে ভারতের অগ্রগতিতে বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে। করোনা প্রসঙ্গে মোদী বলেন, 'প্রত্যেক ভারতবাসীকেই গাইডলাইন মেনে চলা দরকার৷ মানুষ এখনও পর্যন্ত ধৈর্য রেখেছেন, পরেও রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস৷ ঠিক এই কারণেই ভারত আজ অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো জায়গায় রয়েছে৷ এটি একটি দীর্ঘ লড়াই৷ কিন্তু আমরা জয়ের পথেই এগোচ্ছি৷ আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে কাজেই জয় আসবে৷'
আরও পড়ুন: লাদাখ নিয়ে কথাই হয়নি দুই রাষ্ট্রনেতার, মোদীর মনখারাপ নিয়ে ট্রাম্পের দাবি উড়িয়ে দিল ভারত
করোনার জেরে দেশষে লকডাউন চলায় দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, 'করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভারত৷ আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হতে চলেছে ভারত৷' আরও একবার আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের কথা স্মরণ করিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী খোলা চিঠিতে লিখেছেন, 'আমাদের নিজেদের যোগ্যতা ও শক্তিতে এগিয়ে যেতে হবে৷ এটা আমাদের নিজেদের পথ৷ একটাই পথ, আত্মনির্ভর ভারত৷'