রমজান মানে কি রোজা রাখার পর এলাহি ভোজ খাওয়া? অনেকে বলেন, ‘তোমরা সারা রাত ধরে খাবার খাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো!’ বিষয়টা মোটেই খাবার খাওয়ার নয়। সমস্ত সন্তুষ্ট মানুষদের নিশ্চিত করতে হয় যে, নিজের আশেপাশের কোনও রোজাদার ব্যক্তি যেন ক্ষুধার্ত না থাকেন।
রমজান, রোজা, ইফতার বা সেহরির সময় বেশির ভাগ মানুষই শিষ্টাচার ও সঠিক আচরণ সম্পর্কে না জেনেই নিয়ম পালন করেন। ইসলাম ধর্মবিশেষজ্ঞদের মতে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে রাখা ‘ইফতার’ কখনও ‘পার্টি’ হতে পারে না। এটি সর্বশক্তিমান আল্লা এবং মানবআত্মার নম্রতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার সময়। ক্ষুধা আর তৃষ্ণা থেকে এই ভক্তি আসে। আল্লাকে স্মরণ করে যাঁরা দিনে দুই বেলা খাবার গ্রহণ করেন না, তাঁরাই সর্বশক্তিমানের পবিত্রতা অর্জন করতে পারেন। ‘ইফতার’ কখনও অন্য লোকেদের জন্য নয়। সারাদিন খাওয়া এবং 'পার্টি'-তে যোগ দেওয়াটাও একটা খামখেয়ালী গেট-টুগেদার হয়ে ওঠে, যা কখনওই রমজানের নিয়ম নয়।
৫০ বছর বয়সী রানা সিদ্দিকি জ়ামান বলছেন, দুর্ভাগ্যবশত একজন মানুষ মুসলমান হিসাবে বা কোনও কোনও অমুসলিম মানুষও ইসলাম ধর্মের প্রতি সংহতি দেখানোর জন্য রমজান মাসে উপবাস করে থাকেন। মুসলমানরা প্রায়শই এক ধরনের ইফতার 'পার্টি'-র আয়োজন করেন, যেখানে খাবারের টেবিলে প্রচুর খাবার এবং স্ন্যাকস ছড়িয়ে থাকে। অতিথিদের সঠিক ড্রেস কোড সম্পর্কে অবগত করা হয় না, ঠিকমতো শরীর ঢেকে রাখার নিয়ম জানানো হয় না। অতিথিরা কেউ কেউ হাফপ্যান্ট, কার্গো প্যান্ট এমনকি জিন্স, টি-শার্ট পরেও এই ‘পার্টি’-গুলোতে অংশ নিতে আসেন। তাঁদের কাছে রমজান মানে কি শুধু রোজা রাখার পর এলাহি ভোজের আয়োজন?
অতিথিদের খাবার দেওয়া জন্য সঠিকভাবে 'দস্তরখওয়ানে' বিছিয়ে দিতে হয়। 'দস্তরখওয়ানে' হল খাবার বেড়ে দেওয়ার জন্য লম্বা মাদুর। প্রায় ১৭ ঘণ্টার রোজা রাখার পর মানুষ ক্ষুধা, তৃষ্ণা, মাথাব্যথা এবং যাবতীয় শারীরিক দুর্বলতা ও কষ্ট সহ্য করতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রায় ১ মাসব্যাপী উপবাস থেকে শরীর সুস্থ হতে শেখে। ২০১৬ সালের নোবেল পুরষ্কারজয়ী জাপানী কোষ জীববিজ্ঞানী ইয়োশিনোমোরি ওশুম নিজের গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছিলেন যে, টানা ২৮ দিন ধরে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা উপবাস মানুষের শরীরের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করতে পারে।
রোজা রাখার পর মুখে প্রথম খেজুর দেওয়ার আগে, উচ্চারণ করতে হয় কতগুলি পবিত্র শব্দ: আল্লাহ হুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া বিক আ আমানতু, ওয়া আলাইকা তাওয়াকালতু, ওয়া-লা রিজকিকো আফতারতু, ইয়া আল্লাহ। (আল্লাহ, আমি তোমার প্রতি আমার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য প্রার্থনা করি। আমি তোমার। আমি তোমার জন্যই এই রোজা রেখেছি এবং এখন আমি এটা ভঙ্গ করছি)।
সমস্ত ভারতীয় অবশ্যই জানেন যে, রমজান মাসটি মুসলমানদের রোজা রাখা সম্পর্কিত। এটা কোনো 'পার্টি' নয়। এটা দান করার সময়। কাবাব এবং বিরিয়ানির সময় নয়। অনেকে বলেন, ‘তুম লগ তো রাত ভর খাতে রেহতে হো না?’ (তোমরা সারা রাত ধরে খাবার খাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো!) মুসলমানদের সম্পর্কে বহু ভিন ধর্মীয় মানুষের এমনই ধারণা রয়েছে। রানা সিদ্দিকি জ়ামান বলছেন, এটা মোটেই খাবার খাওয়ার বিষয় নয়। ধনী এবং সন্তুষ্ট মানুষদের নিশ্চিত করতে হয় যে, নিজের আশেপাশের কোনও রোজাদার ব্যক্তি (যিনি রোজা রেখেছেন) তিনি যেন ক্ষুধার্ত না থাকেন। মুসলমানদের কাছে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন যে, “আপনি কখনও ইফতার পার্টিতে নিমন্ত্রণ করলেন না!” কিন্তু, তাঁরা হয়তো জানেন না যে, সন্ধ্যায় ইফতার খাবার এবং সেই পবিত্র পরিবেশের মধ্যে আমন্ত্রিত হওয়ার জন্য সারাদিন ধরে উপোস থাকা জরুরি।
এছাড়াও, আরও বড় একটি ভুল হল, ইফতারের সময় কাউকে ফোন করা বা তাঁর নাম ধরে ডাকা। রানা সিদ্দিকির মতে, খুব জরুরি না হলে রোজা রাখা মানুষকে ইফতার করার সময় ডাকতে নেই। এটা তাঁকে এবং তাঁর পবিত্র ধর্মপালনকে সম্মান করার বিষয়। তাই, রমজান মাসে সন্ধ্যার আহারের সময় কোনও মুসলমান ব্যক্তিকে ডাকা উচিত নয়।
আরও পড়ুন-
Ram Navami 2023: রাম নবমীতে হওয়া অশান্তির দায় কার? বাংলাকে চিঠি পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন
চলতি সপ্তাহে অব্যাহত থাকবে বৃষ্টি, তাপমাত্রার পারদ নামার বার্তা দিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর
এপ্রিলের শেষদিকে কোন শহরে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দাম? দেখে নিন শনিবারের পেট্রোল-দর