ফুসফুসে নয়, গভীর ক্ষত মনে - এখনও একঘরে হয়ে আছেন ভারতের অন্যতম প্রথম করোনা রোগী

দিল্লির প্রথম তথা ভারতের পঞ্চম করোনা রোগী

সংক্রামিত হওয়ার পর কেটে গিয়েছে একটা বছর

করোনা তাঁর ফুসফুসের থেকেও বেশি ক্ষতি করেছে মনের

মানসিকভাবে এখনও একঘরে হয়ে রয়েছেন তিনি

ভারতে প্রথম করোনা রোগী ধরা  পড়েছিল ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। তার প্রায় ১ মাস পর ২৫ ফেব্রুয়ারি, ইতালি থেকে নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছিলেন টেক্সটাইল ব্যবসায়ী রোহিত দত্ত। দিন দুই পরই জানতে পেরেছিলেন তিনি কোভিড পজিটিভ। তিনিই ছিলেন দিল্লির প্রথম এবং ভারতের পঞ্চম করোনা রোগী। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে গোটা একটা বছর। কীভাবে কাটল তাঁর বছরটা?

ব্যবসার কাজেই ইতালি গিয়েছিলেন ৪৫ বছরেররোহিত। দেশে ফেরার রাতেই তাঁর জ্বর এসেছিল। আর পাঁচজনের মতো তিনিও একটি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরদিন স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখাতে, তিনি তিন দিনের জন্য রোহিতকে কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে তাঁর উপসর্গগুলি বেশ কমে গিয়েছিল। নিশ্চিন্ত মনে ২৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ দিল্লির হায়াত রিজেন্সিতে ছেলের জন্মদিনের জন্য একটি পার্টিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই রাতেই ফের জ্বর এসেছিল তাঁর, সঙ্গে শুকনো কাশি। ততদিণে উত্তর ইতালি-র ভয়াবহ কোভিড সংক্রমণের কথা বিশ্বে ছড়াতে শুরু করেছে। ঠিক সেখানেই গিয়েছিলেন বলে, উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল রোহিত দত্তর মনেও। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে কোভিড -১৯ পরীক্ষা করান তিনি।

Latest Videos

২ মার্চ, ফল আসে ইতিবাচক। চিকিত্সা শুরু হয় সফদরজং হাসপাতালে। সেই সময় দিল্লিকে ওই হাসপাতাল ছাড়া আর মাত্র একটি হাসপাতালকেই কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। রোহিতের উপসর্গ খুব গুরুতর ছিল না, তাই হাসপাতালে দ্রুতই তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছিল। তিনি ভেবেছিলেন ১৪ দিনের কোরারেন্টাইনের পর আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন। কিন্তু, বাস্তবে কোভিডমুক্ত হওয়ার পরই শুরু হয়েছিল তাঁর আসল সংগ্রাম।

রোহিতের কোয়ারেন্টাইন পর্ব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছিল লকডাউন। আর তার থেকেও বড় কথা হল, সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল তাঁর ব্যক্তিগত বিবরণ। হাসপাতালের বেড নম্বর থেকে শুরু করে তাঁর ফোন নম্বর, ছবি এবং এমনকী তাঁর দুই সন্তানের সম্পর্কেও সবকিছু বিশদ এসে গিয়েছিল জনসমক্ষে। ফোন নম্বর ফাঁস হতেই শুরু হয়েছিল বেনামী ফোনকল। অনেকেই তাঁকে ফোন করে কুকথা, কটুক্তি করেছিলেন। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার প্রক্রিয়য়া শুরু হয়েছিল। প্রায় ১,৫০০ ফোন নম্বর ব্লক করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পুলিশে অভিযোগও জানিয়েছিলেন, বিশেষ কাজ হয়নি। তাঁর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কাগজপত্রও রোহিত বা তাঁর চিকিত্সকদের হাতে আসার আগেই প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমে।

রোহিত আরও জানিয়েছেন, নিজে আক্রান্ত হওয়ার আগে তিনি এই রোগটি সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানতেন না। অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন, একেবারে প্রথম দিকেসংক্রামিত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠায় তিনি ভাগ্যবান। তবে, রোগটি সম্পর্কে তথ্য় সংগ্রহ করা শুরু করার পর তিনি জেনেছিলেন এই রোগে ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা। এই নিয়ে তৈরি হয়েছিল উদ্বেগ। কিন্তু, ফুসফুসের ক্ষতর থেকেও ছাড়া পাওয়ার পর আরও গভীর মানসিক ক্ষত তৈরি হয়েছিল তাঁর। সেই উদ্বেগ ছিল অনেকটাই বেশি।

রোহিত জানিয়েছেন, সেই সময় রোগটি নিয়ে ভারতে এক অদ্ভূত ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর দেখেছিলেন পাড়া-প্রতিবেশি, আশপাশের মানুষজন তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছে, অন্য নজরে দেখছে। তাঁকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজেদের  মধ্যে নিচু স্বরে কথা বলছে। তিনি কাছাকাছি আসলেই বাকিরা দূরে সরে যাচ্ছে। এই মানসিক ক্ষত তাঁর এখনও সাড়েনি। তিনি এখন একেক বারে একজনের বেশি বন্ধু বা পরিচিত জনের সঙ্গে দেখা করেন না। শপিং মলে যান না। ব্যবসার ক্ষতি স্বীকার করেও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাত এখনও করেন না। কেউ নিচু স্বরে কথা বললে, তাঁর এখনও মনে হয়, তাঁকে নিয়েই বোধহয় কথা হচ্ছে।

তবে, চলতি বছরে এই অস্বাভাবিক যানের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করছেন তিনি। করোনা টিকা গ্রহণ নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় থাকলেও, রোহিত কিন্তু, ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। তাঁর নৈরাশ্য, মানসিক বাধা কাটাতে সাহায্য করেছেন তাঁর চিকিৎসকরা, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, বিষয়টা অনেকটা শিশুদের টিকা দেওয়ার মতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিন সম্পর্কে কিছু না জেনেও, চিকিত্সকদের প্রতি বিশ্বাস রেখেই মানুষ সন্তানদের টিকাকরণ করান।

রোহিতের চিকিৎসা করা ডাক্তাররা ইতিমধ্যেই শট নিয়েছেন। তাই করোনা ভ্যাকসিন সম্পর্কে তাঁরও মনে বিশ্বাস আছে, তাঁর পালা এলে তিনি তো টিকা নেবেনই, বাকি সকলকেও তিনি টিকা গ্রহণের জন্য আহ্বান করেছেন। কারণ, অস্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড়দের কিছু অসুবিধা হলেও, তাঁরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু, শিশুদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান শৈশব। তাই, একবছর মানসিকভাবে একঘরে হয়ে গিয়েও ফের মূলস্রোতে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন ভারতের অন্যতম প্রথম এই করোনা রোগী।

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Chinmoy Krishna-কে আমি মুক্ত করবোই’ নির্ভীক Bangladeshi আইনজীবী Rabindra Ghosh-এর চরম প্রতিশ্রুতি
‘এক প্রভু জেলে আছেন লক্ষ্য প্রভু তৈরি হয়ে গিয়েছেন’ Suvendu Adhikari-র তীব্র হুঙ্কার
আরে ওরা কি করবে, সেদিন আমি ওদের সামনে আরতি করে বুঝিয়ে দিয়েছি : শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
বড়দিনের সন্ধ্যায় কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জনজোয়ার | Park Street Christmas | Kolkata News
Suvendu Adhikari Live : কোলাঘাটের মঞ্চে বিস্ফোরক ভাষণ শুভেন্দু অধিকারীর, সরাসরি | Bangla News