করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ না মেনে ভোটের প্রচার চলায় নির্বাচন কমিশনকে রীতিমত তুলোধনা করেছিলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বাঙালি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োজনে আগামী ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এটাই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার পর্যবেক্ষণ বা রায়দান করায় সংবাদ শিরোনামে এসেছেন তিনি। রইল সেই মামলাগুলিঃ
কমিশনকে তুলোধনাঃ নির্বাচন কমিশনকে কার্যত তুলোধনা করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ২ মে পশ্চিমবঙ্গসহ চারটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে ভোগ গণনা স্থগিত করে দেওয়ারও হুমিকি দিল। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে মামলা করা উচিৎ বলেও হুশিয়ারি দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। করোনা মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গের জন্য একমাত্র নির্বাচন কমিশনকেও দায়ি করা হয়েছে। আর এই সবই হয়েছে ভোট প্রচারে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গাছাড়া মনোভাবের অভিযোগ ওঠায়।
পুজো প্যান্ডেলে প্রবেশ নিষেধ- গত অক্টোবরে কলকাতার পুজো প্যান্ডেলে জনগণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই সময় কলাকাতা হাইকোর্টের অন্যতম সিনিয়ন বিচারপতি পদে ছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কলকাতার পুজো প্যান্ডেলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।মহামারিকালে স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দূর থেকেই ঠাকুর দর্শনের ওপরেও জোর দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। পুজোর সময়েও ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছিল।
করোনাকালে বাজিতে না- কালীপুজোর সময় সমক্রমণ রুখতে বাজি পোড়ানোর ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তিনি। উৎসব পালনের থেকে মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা বেশি জরুরি বলেও সেই সময় তাঁর পর্যবেক্ষণ ছিল।
করোনাকালে বেসরকারি স্কুলে ফি কমানো- করোনাকালে বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি কমানো। মহামারির এই সময় স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পুরো ফি নেওয়া হচ্ছিল। এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিছু অভিভাবক। সেই সময় সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের বেঞ্জ ২০২০ -২১ অর্থবর্ষের জন্য ২০ শতাংশ ফি কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল।
মহিলাদের জীবনসঙ্গী- প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের পছন্দের জীবনসঙ্গে বেছে নেওয়া ও বিয়ে করার স্বাধীনতার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন তিনি। প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করা প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ ছিল, কোনও মহিলা নিজের ইচ্ছে ধর্মান্তরিত হতে পারে। নিজের ইতচ্ছে বিয়ে করে বাবার বাড়িতে ফিরতে না চাইলে আদালত হস্তেক্ষেপ করতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
চলতি বছর ৪ ডিসেম্বর মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি পদের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও আইন নিয়ে পড়ার পর কলকাতা হাইকোর্টে ১৯৯০ সালে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টেও ছিল তাঁর সফল যাতায়াত। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।