পুলিশ জানিয়েছে ফ্ল্যাটের একটি বেডরুম থেকেই তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি সুইসাইড নোটেও পাওয়া গেছে। যেখানে স্পষ্ট করে আগুন জ্বালতে নিষেধ করা হয়েছে।
এক মর্মান্তিক ঘটনা সাক্ষী থাকল দেশের জাতীয় রাজধানী। দিল্লির একটি বিলাশবাহুল বহুতলের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হল মা ও দুই মেয়ের নিথর দেহ। সঙ্গে হাড়হিম করে দেওয়া একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। সেখানে উদ্ধারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে সাবধান, ঘরে ঢুকে কখনই দেশলাইকাঠি জ্বালাবেন না। ঘরে রয়েছে বিষাক্ত গ্যাস। তাতে আগুন লেগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাবধানে নিঃশ্বাস নিতেও বলা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ দিল্লির ফ্ল্যাটে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। বছর ৫০এর এক মহিলা ও তাঁর দুই মেয়ের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের কথায় ঘরটিকে পুরো গ্যাস চেম্বারে পরিণত করা হয়েছিল। বসন্ত বিহারের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এজাতীয় ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের সদর দরজা, জানালা আর ভেন্টিলেটরগুলি প্রত্যেকটি ভালো করে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে ঘরের ভিতরের হাওয়া বা গ্যাস বাইরে যেতে না পারে। অন্যদিকে বাইরে থেকে যাতে কোনও গ্যাস বা হাওয়া ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। পুলিশের অনুমান ঘরের মধ্যে ধোঁয়া তৈরি করা হয়েছিল।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই বাড়ির গ্যাসের নব চালু করা ছিল- অর্থাৎ গ্যাস বার হয়েছে ক্রমাগত। তার সঙ্গে একটি আঙ্গিথি বা কয়লার আগুনও জ্বালান হয়েছিল। কয়লার আগুন আর বায়ু চলাচল বন্ধ করে দেওয়া ঘরের মধ্যে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়েছিল। তাতেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তবে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনটি দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হয়েছে। ফরেন্সিক দলও নমুনা সংগ্রহ করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে ফ্ল্যাটের একটি বেডরুম থেকেই তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি সুইসাইড নোটেও পাওয়া গেছে। যেখানে স্পষ্ট করে আগুন জ্বালতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘরেও সাবধানে ঘোরাঘুরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরো সুইসাইড নোটটি ইংরেজিতে লেখা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে মৃতরা হল মঞ্জু শ্রীবাস্তব ও তাঁর দুই মেয়ে আশিকা ও অঙ্কু। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন দীর্ঘ দিন ধরেই এই পরিবারের সদস্যরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করত না। গত চারপাঁচ দিন ধরে ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। পরিবারের কোনও সদস্যকে বাড়িরে বাইরে যেতে দেখেনি। শনিবার সকাল থেকেই একাধিকবার ঢেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। তারপরই স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে তিনটি দেহ উদ্ধার করে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, এই পরিবারের কর্তা উমেশচন্দ্র শ্রীবাস্তব কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকে ই মেয়েরা চূড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়েছিল। তাদের মা মঞ্জু শ্রীবাস্তবও দীর্ঘদিন ঘরে সজ্জসায়ী। আবাসিক সোসাইটির সভাপতি এম ডেভিড জানিয়েছেন গোটা ঘটনা মর্মান্তিক। ঘটনার তদন্ত চলছে। ফ্ল্যাটটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।