বিলকিস বানো-কাণ্ডে এক্ষুনি মুক্তি নয় অপরাধীদের, গুজরাত সরকারকে নোটিশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিন বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন আসামীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। সিবিআই-এর বিশেষ আদালতের মতে 'বিরল থেকে বিরলতম' আখ্যাপ্রাপ্ত অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের কোন যুক্তিতে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল গুজরাত সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে।  
 

Ishanee Dhar | Published : Aug 25, 2022 7:23 AM IST

বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার গুজরাত সরকারকে নোটিস দিল আদালত। 
গত ১৫ অগাস্ট দেশের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিন বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন আসামীকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। সিবিআই-এর বিশেষ আদালতের মতে 'বিরল থেকে বিরলতম' আখ্যাপ্রাপ্ত অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের কোন যুক্তিতে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল গুজরাত সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। শুধু মুক্তির সিদ্ধান্তই নয়, স্বাধীনতা দিবসের দিনই ফুল, মালা, মিষ্টিতে বরণ করে নেওয়া হয়েছিল অপরাধীদের। এমনকী এক বিজেপি বিধায়ক অপরাধীদের ব্রাহ্মণ পরিচয় দেখিয়ে সংস্কারী আখ্যাও দিয়েছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন পলিটব্যুরো সদস্য সুভাষিণী আলি ও তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।  প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার এজলাসে গৃহীত হয় মামলাটি।  বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত পুণরায় খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়ে একটি আবেদন পত্র সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন তৃণমূল সাংসদ। 

গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্ত শুনে আক্ষেপের সুর বিলকিস বানোর গলায়। বিলকিস বলেছেন," আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম, এখনও বোবা হয় আছি। বিগত ২০ বছরের আতঙ্ক যেন ফের গ্রাস করল আমায়। আমার জীবন আমার পরিবারকে শেষ করে দেওয়া ১১টা লোক মুক্তি পেয়ে গেল।"

এই প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্র বলেছেন,, "অসুস্থতা বা বয়সের কারণে কারও ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কিন্তু একসঙ্গে ১১ জনকেই কী যুক্তিতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল গুজরাত সরকার, তা বোধগম্য নয়। তা স্পষ্টও করেনি গুজরাত সরকার।আমরা চাই এ ধরনের মুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন (নির্দেশিকা) তৈরি করে দিক সুপ্রিম কোর্ট।"
মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে সিবিআই-এর সঙ্গে কেন কোনও আলোচনা করা হল না সে বিষয়ও প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদ। 
গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গত মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন তৃণমূল সাংসদ। আজ সেই মামলার ভিত্তিতেই গুজরাত সরকারকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট। 

আরও পড়ুনকোন যুক্তিতে মুক্তি বিলকিস বানোর ধর্ষকদের? গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মহুয়া 


প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ড পরবর্তী সময় গুজরাতের সাম্প্রদায়ীক হিংসার শিকার হন দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামের বিলকিস বানো। ৩ মে ভয়াবহ হামলা চালানো হয় গ্রামে, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। চোখের সামনে পাথরে আছাড় মেরে খুন করা হয় তাঁর তিন বছরের মেয়েকে। হত্যা করা হয় তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যকে। এই ভয়াবহ অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দেয় সিবিআই-এর বিশেষ আদালত। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। 
আসামীদের মধ্যে একজন মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই গত ১৫ অগাস্ট  গোধরা জেল থেকে ১১ জনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সরব হয় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। 

আরও পড়ুনকোন দেশে ধর্ষকদের বরণ করে এত মাতামাতি হয়! ১১ ধর্ষকের মুক্তির পর বিস্মিত বিলকিস বানোর স্বামী

Share this article
click me!