সংক্ষিপ্ত
গোধরার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দফতরে ধর্ষকদের গলায় মালা, মুখে মিষ্টি দিয়ে বরণ। বিজেপি বিধায়ক সিকে রাউজি বলেছেন, এই ধর্ষকদের ‘স্বভাব-চরিত্র ভালো’। এ সব দেখে বিস্মিত বিলকিসের স্বামী ইয়াকুব রসুল।
গোধরার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দফতরে ধর্ষকদের গলায় মালা, মুখে মিষ্টি দিয়ে বরণ। ধর্ষণের বিচার চেয়ে ১৮ বছরের যুদ্ধ ব্যর্থ হয়েছে। ধর্ষকদের নিয়েও যে একটা উন্নয়নশীল দেশে মাতামাতি হয়, তা তাঁর সুদূর কল্পনাতেও ছিল না। গুজরাতের বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষকের মুক্তির ঘটনায় এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাঁর স্বামী ইয়াকুব রসুল।
গত ১৫ অগস্ট গুজরাত জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে ১১ জন ধর্ষক, যারা ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় থাকা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করেছিল। তাঁর ৩ বছরের ছোট্ট মেয়েকে আছড়ে মেরেছিল মায়ের চোখের সামনে। ‘খুন’ হয়েছিলেন বিলকিসের পরিবারের মোট ৮ জন। ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সেই ১১ জন ‘স্বাধীন’ হয়েছে গত ১৫ অগস্ট। ১৫ বছর জেলে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিল এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। শীর্ষ আদালত বিষয়টি পাঠায় গুজরাত সরকারের কাছে। সরকার বিবেচনা করে এই ১১ জনকে মুক্তি দেয়।
ধর্ষক রাধেশ্যাম শাহ সহ মুক্তি পেয়েছে যশওয়ান্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা ৷ জেল থেকে মুক্তি পেতেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে ধর্ষকদের গলায় পরানো হয়েছে ফুলের মালা, মুখে তুলে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি। গুজরাতের গোধরার বিজেপি বিধায়ক সিকে রাউজি বলেছেন, এই ধর্ষকদের ‘স্বভাব-চরিত্র ভালো’। এ সব যতই দেখছেন আর শুনছেন, ততই বিস্মিত হচ্ছেন বিলকিসের স্বামী।
গণহত্যা আর গণধর্ষণের শিকার হয়ে গত কয়েক বছরে বার বার নিজেদের ঠিকানা বদলেছে বিলকিসের পরিবার। এখনও পর্যন্ত আশঙ্কায় এবং আতঙ্কে নিজেদের ঠিকানা প্রকাশ করতে চান না ইয়াকুব। তাঁর কথায়, “বিলকিস তো এতটাই বিস্মিত যে এখনও পর্যন্ত কারও সঙ্গে ঠিক করে কথাই বলছে না। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্ষকদের মুক্তির ছবি দেখছি। কেউ কেউ এসে জানাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম আমাদের প্রতিক্রিয়া চাইছে।” এর পর ইয়াকুবের সংযোজন, “প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি যে এমনটা হয়েছে। পরে জানলাম, হ্যাঁ। এটাই সত্যি। বিলকিসকে গিয়ে বললামও সে কথা। ও শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেল।”
ইয়াকুব বলেন, “সরকারের এই সিদ্ধান্ত এক ঝটকায় আমাদের ১৮ বছরের লড়াইকে শেষ করে দিয়েছে। গত ২ দশক একের পর এক আদালতে ছুটেছি।” তিনি আরও বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে ধর্ষকদের নিয়ে উদ্যাপন শুরু হয়েছে। ওরা যেন নায়ক!” ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ৫০ লক্ষ টাকা এবং সরকারি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেয়, ইয়াকুব ভেবেছিলেন আবার নতুন করে শুরু করবেন সব। বলেন, “সবে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। তখনই এল এই ঝটকা।”
ধর্ষকদের মুক্তির পর ভয়ে কাঁপছে বিলকিসের পরিবার। “এক জন দোষী যখন প্যারোলে ছাড়া পেত, ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম আমরা। ১১ জনের মুক্তির পর আমাদের মনের অবস্থা ঠিক কী, আপনারাই বুঝে নিন।”
আরও পড়ুন-
'আমাদের বিশ্বাস ফুরায় না', গুজরাটে শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের পতাকা উত্তোলন করে বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
দুর্গাপুজোয় কত অনুদান পাবে পুজো কমিটিগুলি? নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর