২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূল ষড়যন্ত্রকারী তাহাউর হুসেন রানা অবশেষে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নিজের ভূমিকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন 'বিশ্বস্ত এজেন্ট' হিসেবে কাজ করছিলেন। রানার এই স্বীকারোক্তি ২৬/১১ হামলার তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছে তদন্তকারীরা।
27
লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রানা
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী তাহাউর রানা, যিনি বর্তমানে দিল্লির তিহার জেলে এনআইএ-এর হেফাজতে রয়েছেন। মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রানা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর বন্ধু ও সহযোগী ডেভিড কোলম্যান হেডলি পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে একাধিক প্রশিক্ষণ সেশনে অংশ নিয়েছিলেন। রানার এই স্বীকারোক্তি তদন্তে আরও গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দিয়েছে।
37
গুপ্তচর নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ
তদন্তকারী সূত্র জানিয়েছে, রানা উল্লেখ করেছেন যে লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) মূলত একটি গুপ্তচর নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করত। রানা তদন্তকারীদের বলেছেন যে, মুম্বইয়ে তাঁর সংস্থার একটি ইমিগ্রেশন সেন্টার খোলার ধারণাটি তাঁর নিজেরই ছিল। এই সেন্টারের সমস্ত আর্থিক লেনদেনকেও তিনি 'ব্যবসার খরচ' হিসেবে দেখিয়েছিলেন।
আরও গুরুতর বিষয় হল, রানা স্বীকার করেছেন যে, ২৬/১১ হামলার সময় তিনি মুম্বইতেই উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মুম্বইতে উপস্থিতি ছিল জঙ্গিদের পরিকল্পনারই একটি অংশ। রানার এই স্বীকারোক্তি হামলার ষড়যন্ত্রের গভীরে প্রবেশে তদন্তকারীদের আরও সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
57
রানার সঙ্গে আইএসআই-এর যোগসাজশ ছিলো
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী তাহাউর রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। রানা জানিয়েছেন যে, তিনি হামলার আগে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস (সিএসএমটি)-এর মতো স্থানগুলি ঘুরে দেখেছিলেন। রানা দাবি করেছেন যে, ২৬/১১-এর এই ভয়াবহ হামলা পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর সহযোগিতায় সংঘটিত হয়েছিল। রানার এই বক্তব্যে হামলার নেপথ্যে আইএসআই-এর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং তদন্তে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
67
খলিজ যুদ্ধেও সহযোগী ছিলেন তাহাউর রানা
৬৪ বছর বয়সী তাহাউর রানা জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন। সূত্রের খবর, রানা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, খালিজ যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিল। এই তথ্য রানার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গভীর সংযোগের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। রানার এই সব স্বীকারোক্তির পর মুম্বই পুলিশ দ্রুত তাকে গ্রেফতার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা গিয়েছে, মুম্বই পুলিশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রানাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে, যাতে ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রের গভীরে পৌঁছানো যায়।
77
এনআইএ হেফাজতে জেরা রানাকে
ডেভিড হেডলির ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তাহাউর রানাকে চলতি বছরের শুরুতে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। তার প্রত্যর্পণের পথ সুগম হয়েছিল গত ৪ এপ্রিল মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক তার পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার পর। ভারতে পৌঁছানোর পর মে মাসে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) রানাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নেয়। বর্তমানে তাকে একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে জেরা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্র, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটন এবং জালিয়াতি। ২৬/১১ মুম্বই হামলায় তার ভূমিকার বিষয়ে আরও তথ্য উদঘাটনের জন্য এই জেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।