রামায়ণে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল সীতাকে। কিন্তু সেটা ছিল ত্রেতাযুগ। ২০২৩-এ এসেও কাউকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে, সেটা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। অথচ সেটাই হয়েছে তেলঙ্গানায়।
স্ত্রী সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে ভাইয়ের। পঞ্চায়েতে গিয়ে এই অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। এরপর পঞ্চায়েতের নির্দেশে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হল। অবশ্য তাঁকে আগুনে প্রবেশ করতে হয়নি। জ্বলন্ত কয়লার মধ্যে রাখা লোহার রড খালি হাতে ধরে বাইরে নিয়ে আসতে হয় অভিযুক্তকে। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হননি পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা। 'ভুল' স্বীকার করে নেওয়ার জন্য তাঁরা অভিযুক্ত যুবকের উপর চাপ দিতে থাকেন। শেষপর্যন্ত অভিযুক্তর স্ত্রী পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ায় অত্যাচার বন্ধ করতে বাধ্য হয় পঞ্চায়েত। অভিযুক্ত যুবকের স্ত্রীর দাবি, এই ঘটনায় ১১ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে তাঁর স্বামীকে। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা যায়নি। অভিযোগকারীর পাল্টা দাবি, তাঁর ভাই নিজেই গরম লোহার রডে হাত দিয়ে জখম হয়েছেন। তাঁকে কেউ অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করেনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনা ঘটেছে তেলঙ্গানার মুলুগু জেলার বাঞ্জারাপল্লি গ্রামে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম গঙ্গাধর। তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকমাস আগে পঞ্চায়েতে অভিযোগ দায়ের করেন দাদা জগন্নাথম। তিনি এই ঘটনার বিচার করতে বলেন পঞ্চায়েতকে। এরপর পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেন। গঙ্গাধর তাঁর বৌদির সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর কোনও কথাই শোনেনি পঞ্চায়েত। গঙ্গাধরকে ১১ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়। জগন্নাথম অভিযোগ দায়ের করার ৩ মাস পরেও মীমাংসা না হওয়ায় পঞ্চায়েত নিদান দেয়, গঙ্গাধরকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। গ্রামের মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি নির্দোষ হন, তাহলে তিনি হাতে গরম লোহার রড নিলেও হাত পুড়বে না। যদি কারও হাত পুড়ে যায়, এর অর্থ হল তিনি মিথ্যা বলছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি গঙ্গাধরকে এই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়। তাঁর স্ত্রীর দাবি, হাত পুড়ে যায়নি। কিন্তু পঞ্চায়েত সে কথা মানতে নারাজ। বৌদির সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য গঙ্গাধরের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। তাঁরা যে ১১ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন, সেটা থেকে ৬ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করা হয়েছে।
জগন্নাথমের অবশ্য দাবি, ‘গঙ্গাধর আমার ভাই। আমার স্ত্রীর সঙ্গে ওর সম্পর্ক আছে। আমাদের রীতি অনুযায়ী ও অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছে। ওর হাত পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ও সে কথা স্বীকার করছে না। ও লিখিতভাবে আমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে। আমরা ওকে জরিমানা দিতে বলি। এখন ও থানায় অভিযোগ দায়ের করে আমাদের হেনস্থা করছে।’
আরও পড়ুন-
পার্সোনাল জেটে কর্মচারীর জন্মদিন উদযাপন, অনন্ত আম্বানির ভিডিও দেখে আপ্লুত নেটিজেনরা