তিরুপতি মন্দির দিনে কত লাড্ডু তৈরি হয় জানেন? লাড্ডু বিক্রি করে রোজগার কোটি কিটো টাকা

তিরুপতির সাত পাহাড়ি মন্দির দেশের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই মন্দিরে ভিড় জমান। সম্প্রতি তিরুপতির প্রসাদ লাড্ডু নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিরুপতির লাড্ডুতে প্রচুর পরিমাণে ‘জানোয়ারের চর্বি’ পাওয়া গেছে, এই খবর সামনে আসার পর থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত।

 বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু অভিযোগ করেছিলেন যে, পবিত্র তিরুপতি লাড্ডুতে ভেজাল মেশানো হয়েছে। তিনি ওয়াইএসআর কংগ্রেস সরকারের সময় এই ভেজাল মেশানোর কাজ হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন। এরপর থেকেই তিরুপতি লাড্ডু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। চন্দ্রবাবু নাইডুর অভিযোগ, বিশুদ্ধ ঘি-এর পরিবর্তে তিরুপতি লাড্ডু তৈরিতে জানোয়ারের চর্বি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই খবর সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

তবে চন্দ্রবাবু নাইডুর অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন মোহন রেড্ডি। তিনি তাঁর এক্স পেজে লেখেন, “চন্দ্রবাবু নাইডু তিরুমালার মতো পবিত্র মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। তিনি ১০০ কোটি হিন্দুর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন।”

তবে পরীক্ষার পর জানা গেছে, ঘি-তে ‘জানোয়ারের চর্বি’ মেশানো হয়েছিল। গুজরাটের ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড তিরুপতি লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহৃত ঘি পরীক্ষা করে। সেখানেই জানোয়ারের চর্বি মেশানোর কথা ধরা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার তিরুপতি দেবস্থানম বোর্ড এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এমনকি, ওই ঘি-তে "গরুর চর্বি, শূকরের চর্বি এবং মাছের তেল" মেশানো হয়েছিল বলেও জানা গেছে। তিরুপতির প্রসাদে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ নিয়ে তেলেগু দেশম পার্টি এবং ওয়াইএসআরসিপি-র মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় সারা দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

প্রতিদিন তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম প্রায় ৩ লক্ষ লাড্ডু তৈরি করে। সূত্রের খবর, এই লাড্ডু বিক্রি করে বছরে ৫০০ কোটি টাকা আয় করে তিরুপতি মন্দির। তিরুপতি মন্দির চত্বরে এবং বাইরে স্থাপিত কাউন্টার থেকে লাড্ডু বিক্রি করা হয়। তিরুপতির লাড্ডু তিনটি আকারে পাওয়া যায়। ছোট, মাঝারি এবং বড়। ছোট লাড্ডুর ওজন ৪০ গ্রাম, মাঝারি লাড্ডুর ওজন ১৭৫ গ্রাম এবং বড় লাড্ডুর ওজন ৭৫০ গ্রাম।

তিরুপতির ছোট লাড্ডু সমস্ত ভক্তদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মাঝারি লাড্ডু ৫০ টাকা এবং বড় লাড্ডু ২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

জানা যায়, ৩০০ বছর আগে প্রথম তিরুপতির ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে লাড্ডু প্রসাদ হিসেবে দেওয়া শুরু হয়। ১৭১৫ সাল থেকে তিরুপতি মন্দিরে ভগবানকে লাড্ডু নিবেদন করা হয় এবং পরে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে তা বিলি করা হয়।

এই লাড্ডুগুলি তিরুপতি মন্দিরের রান্নাঘরে তৈরি করা হয়। এই জায়গাটিকে বলা হয় ‘লাড্ডু পোটু’। রান্নাঘরে ঢোকার আগে রাঁধুনিদের মাথা ন্যাড়া করে পরিষ্কার কাপড় পরতে হয়। লাড্ডু তৈরির জন্য ৬০০ জনেরও বেশি রাঁধুনি নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচের প্রথম লাড্ডুটি ভগবানকে নিবেদন করা হয়। তারপর, বাকি লাড্ডুগুলি ভক্তদের মধ্যে বিলি করা হয়।

প্রতি ছয় মাস অন্তর, বিখ্যাত লাড্ডু প্রসাদ তৈরির জন্য তিরুপতি দেবস্থানম ই-টেন্ডারের মাধ্যমে ১,৪০০ টন ঘি কিনে। ঘি, বেসন, চিনি, ছোট চিনির টুকরো, কাজুবাদাম, এলাচ, কর্পূর এবং কিশমিশ দিয়ে তিরুপতির লাড্ডু তৈরি করা হয়।

তিরুপতিতে লাড্ডু সহ অন্যান্য প্রসাদ তৈরির জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০-৫০০ কেজি ঘি, ৭৫০ কেজি কাজুবাদাম, ৫০০ কেজি কিশমিশ, ২০০ কেজি এলাচ ব্যবহার করা হয়। ঘি-এর গুণমান পরীক্ষা করা হয় আর্দ্রতা, সুগন্ধ, চর্বিমুক্ত অ্যাসিড, খনিজ তেল, রঙ, উৎপাদনের জায়গা সহ আরও অনেক কিছু পরীক্ষা করে।

তিরুপতি মন্দিরে তিন ধরনের লাড্ডু তৈরি হয়। আস্তানা, কল্যাণোৎসব এবং প্রোকতম। জাফরান, কাজুবাদাম এবং বাদাম দিয়ে তৈরি হয় আস্তানা লাড্ডু। এই লাড্ডু শুধুমাত্র বিশেষ উৎসব এবং অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয়। কল্যাণোৎসব লাড্ডু বড় আকারে তৈরি করা হয়। কল্যাণোৎসব সেবায় অংশগ্রহণকারীদের কেবল এই লাড্ডু দেওয়া হয়। প্রোকতম লাড্ডু ভক্তদের মধ্যে নিয়মিত প্রসাদ হিসেবে বিলি করা হয়।

তিরুপতির সাত পাহাড়ি মন্দিরে প্রতিদিন গড়ে ৩.৫ লক্ষ লাড্ডু তৈরি হয়। বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবে ৪ লক্ষ পর্যন্ত লাড্ডু তৈরি করা হয়।