ত্রিপুরায় বিজেপি নেত্রীর এ কি আচরণ! হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির গান গেয়েছিলেন বলে যুবকের জামা খুলিয়ে বেধড়ক মার

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভয়ঙ্কর আক্রমণের ভিডিও দেখে এমন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিভঙ্গের ‘লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সমর্থকরাও। 

Web Desk - ANB | Published : Apr 30, 2023 11:16 AM IST

দুই বন্ধু মিলে ভিডিও তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিওই ডেকে আনল ঘোরতর রাজনৈতিক বিপদ! ত্রিপুরার তরুণ বাপন নন্দীকে বেধড়ক মারধর করলেন স্থানীয় বিজেপির পঞ্চায়েত উপপ্রধান সহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী। ২২ এপ্রিলের এই ঘটনায় ভয়ে শিউরে উঠছেন দেশবাসী। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে ধিক্কার। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভয়ঙ্কর আক্রমণের ভিডিও দেখে এমন ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিভঙ্গের ‘লজ্জা’ বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সমর্থকরাও।

গত ২১ এপ্রিল তারিখে ঈদ উল ফিতর উৎসব উপলক্ষ্যে নিজের এক মুসলমান বন্ধুর সাথে একটি ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন ২৩ বছর বয়সী বাপন নন্দী, লড়াই ভুলে ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরার কথা বলা হয়েছিল তাঁর গানে। হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়ে তিনি কেন ইসলাম ধর্মের উৎসবে এই ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন, এই প্রশ্ন তুলে তাঁকে জনসমক্ষে চূড়ান্ত হেনস্থা করা হয়, জামা খুলে কলার ধরে চড়, থাপ্পড় ও গালিগালাজ করার পাশাপাশি সদলবলে তাঁকে হুমকিও দেন এলাকার বিজেপি নেত্রী ও কর্মী-সমর্থকরা। সেই মারধর চলাকালীন বিজেপির কর্মীদের পক্ষ থেকেই মোবাইলে ঘটনাটির ভিডিও রেকর্ড করা হয়। পরে তাঁরাই সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ত্রিপুরার বিজেপির পঞ্চায়েত উপপ্রধান ও তাঁর সমর্থকের এই আক্রমণাত্মক আচরণ দেখে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ত্রিপুরার মানুষ, ক্ষোভে ফুঁসছেন অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা। নির্যাতিত যুবক বাপন নন্দী ত্রিপুরার উদয়পুরের বাসিন্দা এবং ত্রিপুরার খুপিলং এলাকায় তিনি কাজ করেন। সূত্রের খবর, বাপনকে চূড়ান্ত মারধর করার পরেও থামেননি বিজেপি নেতাকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে একজন গিয়ে স্থানীয় থানায় বাপন নন্দীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। মারধর খাওয়ার পর বাপনকেই পুলিশের সঙ্গে থানায় যেতে হয় জিজ্ঞাসাবাদের উত্তর দেওয়ার জন্য।

শাসকদল বিজেপির এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ত্রিপুরার বহু নাগরিক। ঈদ উপলক্ষ্যে বাপন নন্দী একটি ভিডিওতে অভিনয় এবং একটি গানও গেয়েছিলেন, ভিডিওটিতে সাধারণ মানুষকে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদে বিভক্ত না হয়ে সম্প্রীতির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বলেছিলেন তিনি, এটুকুই ছিল তাঁকে ভয়াবহ আক্রমণের কারণ! ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করার পর স্থানীয় বিজেপি নেতারা তাঁকে ফোন করেছিলেন। বাপন নন্দী জানিয়েছেন, ‘পূর্ব গোকুল নগর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত ডেপুটি হেড আমাকে তাঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন কোনও একটি দরকারে। আমরা একে অপরকে চিনি। সেজন্য আমি সেখানে গিয়েছিলান। গিয়ে দেখি প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক আমার জন্য অপেক্ষা করছে।” এরপরেই বিজেপির পঞ্চায়েত উপপ্রধান ওই মহিলা নেত্রী তাঁকে কলার ধরে মারধর করেন। তিনি বাপনকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে থাকেন যে, কেন তিনি ঈদের ভিডিওতে একজন মুসলিম যুবকের মতো অভিনয় করে নিজের হিন্দু ধর্মকে অপমান করেছেন। প্রচণ্ড মার খেতে খেতে বাপন কেঁদে ওই নেত্রীর পা ধরে ক্ষমাভিক্ষা করতে থাকেন।

সংবাদমাধ্যমকে বাপন জানিয়েছেন, “পঞ্চায়েত নেত্রী আমাকে থাপ্পড় মারেন, সবার সামনে মারধর করেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার ভুলটা কী হয়েছিল। আমি তাঁকে ব্যাখ্যা করেছিলাম যে, ভিডিওটা অন্য চ্যানেল তৈরি করেছে এবং আমাকে তাঁরাই কাস্টিং করেছে। কিন্তু, আমার কথা শোনার মতো কেউ ছিল না।” নন্দী আরও জানান, তিনি ঈদের ভিডিওটির প্রযোজক নন। তিনি শুধুমাত্র এটিতে অভিনয় করেছিলেন, অন্যান্য লোকের মতোই এবং তাঁকে এর জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হল, তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছেম বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাপন ছাড়া আরও দুই তরুণী ওই ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁদের নাম, উমা দেবনাথ এবং স্নেহা ভৌমিক। তাঁরাও জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই ভিডিওটিতে অভিনয় করাটাকে কোনও সমস্যার কাজ বলে মনে করেন না, কারণ, এটা তাঁদের কাজের অংশ ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের মতো তাঁরাও বাপন নন্দীকে সমর্থন করেছেন।

 

 

আরও পড়ুন-

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে এবার বাংলার প্রত্যেক জেলায় বিশেষ নোটিস পাঠাল স্কুলশিক্ষা দফতর 
অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন ফিরহাদ হাকিম, সংবাদমাধ্যমের সামনে কী বললেন তিনি?

Ukraine Kali: যুদ্ধের আকাশে উড়ছে মা কালীর স্কার্ট? ইউক্রেন প্রতিরক্ষা দফতরের ছবি দেখে ‘রণচণ্ডী’ হিন্দু ধর্মীয়রা

Share this article
click me!