মায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভক্তি বিশ্বের নজর কেড়েছিল, মায়ের ১০০তম জন্মদিনে লিখেছিলেন মন ছুঁয়ে যাওয়া বার্তা
প্রয়াত হলেন প্রধানমন্ত্রীর মা হীরাবেন মোদী। ৩০ ডিসেম্বর ভোর রাত ৩.৩০ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০। দুদিন আগে স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল হীরাবেন মোদীকে। বুধবার রাতে আচমকাই শারীরিক অবনতি ঘটে।
মায়ের মৃত্যুর খবর নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান প্রধানমন্ত্রী। মায়ের সঙ্গে প্রধান মন্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতার কথা কারও অজানা নয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট জুড়ে রয়েছে একাধিক প্রমাণ। মায়ের পায়ের কাছে বসে রয়েছে মোদী কিংবা মায়ের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন এমন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। যা প্রমাণ দেয় তিনি নিজের মা-কে কতটা ভক্তি করতেন।
চলতি বছরের জুন মাসে শতবর্ষে পা দিয়েছিলেন হীরাবেন মোদী। মায়েক ১০০ বছরের জন্মদিন উদযাপনে গান্ধীনগরের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন মোদী। সেখানে মা-কে প্রণাম করে পা ধুইয়ে দেন। সেই ছবি এক সময় ভাইরাল হয়েছিল নেট দুনিয়ায়। হীরাবেন মোদীর ১০০ তম জন্মদিন ধুমধাম করে পালন করেছিল গোটা মোদী পরিবার।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত পরিবারের সদস্যরা। হীরাবেন মোদীর জন্মদিনে মায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভক্তি ও শ্রদ্ধা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিল। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি মায়ের জন্মদিনে উপস্থিত হন। শুধু তাই নয়, সেই দিন হীরাবেন মোদীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে গুজরাতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। ভাদোদরায় ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেন মোদী।
সঙ্গে হীরাবেন মোদীর নামে রাস্তার নামকরণ করেছিলেন। গুতরাতের গান্ধীনগরে রায়সান পেস্ট্রোল পাম্প থেকে ৬০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত রাস্তার নাম রাখেন পূজ্য হীরাবেন মার্গ। মায়ের জন্মদিন উলক্ষ্যে তিনি ৪ লক্ষ মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ গিয়েছিলেন। একেবারে অন্যভাবে পালন করেছিলেন মায়ের জন্মদিন। আজ সেই মা-কে হারালেন প্রধানমন্ত্রী।
হীরাবেন মোদীর ১০০ তম জন্মদিনে তিনি তাঁর মাকে একচি ব্লগ উৎসর্গ করেছিলেন। যা নজর কেড়েছিল সকলের। সেখানে হীরাবেন মোদীর সারাজীবনের আত্মত্যাগের পাশাপাশি তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিকের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেই ব্লগে নিজের মনের ভাবনা ও মনের অনুভূতির কথা প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
লিখেছিলেন, একজন মা শুধুমাত্র তার সন্তানদের জন্ম দেন না। তাদের মন, তাদের ব্যক্তিত্ব ও তাদের আত্মবিশ্বাস গঠন করেন। তিনি আরও লেখেন, আমার মা যতটা সরল ততটা তিনি অসাধারণ। সব মায়ের মতোই। আমি আমার মাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে যা লিখব, আমি নিশ্চিত তার সঙ্গে আপনারা আপনাদের মায়ের অনেক মিল পাবেন। পড়ার সময় সেই লেখার মধ্যে আপনি হয়তো আপনার মায়ের ছবি পাবেন।
এভাবে নিজের মায়ের কথা ব্যক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মায়ের প্রতি তাঁর ছিল অসম্ভব শ্রদ্ধা ও ভক্তি। তিনি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েও গুজরাত গিয়েছিলেন মোদী। বুধবারই বিকেলে দেখা করে আসেন। তারপর রাতে আচমকা ছন্দ পতন।
একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর হীরাবেন মোদীকে ইউএন মেহতা ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওলডি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, আহমেদাবাদে ভর্তি করা হয়েছিল। ছোট ছেলে পঙ্কজ ছিলেন হীরাবেন মোদীর সঙ্গে। জানান যায়, প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ভোর রাতে প্রয়াত হন হীরাবেন মোদী। খবর পেয়ে দিল্লি থেকে গুজরাত রওনা হন মোদী।
এদিকে স্বাস্থ্য নিয়ে বরাবরই সচেতন থাকতেন হীরাবেন মোদী। তিনি তেল ও মশলাযুক্ত খাবার খেতেন না। প্রতিদিন মসুর ডাল, ভাত, খিচুড়ি ও রুটি খেতেন। মিছরি ওলাপসি পছন্দ করতেন। জানা যায়, তিনি নিজের খাবার নিজেই রান্না করতে পছন্দ করতেন। যতদিন পেরেছেন তাই করেছেন হীরাবেন মোদী। তিনি ১০০ বছর বয়সে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে নজির গড়েন। সে সময় বৃদ্ধ ব্যক্তিদের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সকলের প্রশ্ন ছিল।
সে যাই হোক, মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গুজরাতে পৌঁছে গিয়েছেন মোদী। আজ একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য কলকাতায় আসার কথা ছিল মোদীর। কিন্তু, বর্তমানে তা বাতিল করা হয়েছে। সম্ভবত, ভিডিও কনফারেন্স দ্বারা এই সকল প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। তবে, এখনও এই বিষয় নিশ্চিত কিছু জানানো হয়নি।