ফাঁসির মঞ্চে শেষ কথা কী বলেছিলেন শহিদ ক্ষুদিরাম, কী ছিল তাঁর শেষ ইচ্ছা

  • ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, ফাঁসি হয়েছিল শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর
  • মাত্র ১৮ বছর বয়সেই দেশের জন্য মৃত্য়ুবরণ করেছিলেন তিনি
  • স্বাধীনতার স্বপ্নে মৃত্যুভয়কেও বশ করেছিলেন
  • ফাঁসির মঞ্চে তাঁর শেষ কথা চমকে দিয়েছিল উপস্থিত সকলকে

 

১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট, ফাঁসি হয়েছিল শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর। বাংলা তথা ভারত হারিয়েছিল এক আদন্ত নির্ভীক সন্তানকে। স্বাধীনতার স্বপ্নে যিনি মৃত্য়ুভয়কেও বশ করেছিলেন। এমনকী, ফাঁসির মঞ্চে তাঁর শেষ কথা চমকে দিয়েছিল উপস্থিত সকলকে।

জন্মের পরই ছেলে মারা যাবে এই অন্ধবিশ্বাসে তাঁর মা তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন মাসির কাছে। সেই থেকেই তাঁর নাম হয় ক্ষুদিরাম। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারের মুজফ্ফরপুরে ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে বোমা ছুড়ে হত্যা করতে গিয়েছিলেন অত্যাচারী ব্রিটিশ বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সাহেবকে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত যে গাড়িটিতে তাঁরা বোমা ছুড়েছিলেন তাতে ছিলেন না কিংসফোর্ড। বদলে দুই ইংরেজ মহিলার মৃত্যু হয়।

Latest Videos

প্রফুল্ল চাকি আত্যহত্য়া করলেও ক্ষুদিরাম ধরা পড়েছিলেন ব্রিটিশদের হাতে। বিচারে তাঁর ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিচারক মি. কর্নডফ। রায় ঘোষণার পর ক্ষুদিরামের মুখে ছিল হাসি। অল্প বয়সী ক্ষুদিরামকে বিচারক কর্নডফ প্রশ্ন করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ফাঁসিতে যে মরতে হবে সেটা সে বুঝেছে তো?
আরও পড়ুন- গর্বের স্বাধীনতা, ১৫ অগাস্টের আগেই পাকিস্তানে গা ঘেঁসে উড়েছে ১০০ ফুট লম্বা ভারতের তেরঙ্গা

স্বাধীনতার আকাঙ্খায় এমনই নির্ভীক ছিলেন মেদিনীপুরের এই বিস্ময় যুবক। রায় ঘোষণার পর জীবনের শেষ কযেকটা দিনে কারাগারে বসে মাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি ও রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়তে চেয়েছিলেন। ১০ আগস্ট আইনজীবী সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, 'রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জওহরব্রত পালন করিত, আমিও তেমন নির্ভয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিব। আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই।'
আরও পড়ুন- Independence Day theme- দেশ আগে-সবার আগে, ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের থিম দেশপ্রেম

আর ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা কী ছিল জানেন? সেইসময়ও দেশের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামকে এগিয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। বলেছিলেন, তিনি বোমা বানাতে জানেন। ব্রিটিশদের অনুমতি পেলে সেই বিদ্যা ভারতের অন্যান্য যুবকদের শিখিয়ে যেতে চান।

তবে ফাঁসির মঞ্চে এসেও যে প্রশান্তি ছিল তাঁর মনে, তা সবচেয়ে বিস্ময়কর। ১৯০৮ সালের ১১ অগাস্ট জেলের ভিতরে গড়া হয়েছিল ১৫ ফুট উঁচু এক ফাঁসির মঞ্চ। দুই দিকে ছিল দুটি খুঁটি। তার উপর একটি মোটা লোহার রড ছিল আড়াআড়িভাবে লাগানো। সেই রডের মাঝখানে মোটা একগাছি দড়ি বাঁধা ছিল। তার শেষ প্রান্তে ছিল মরণ-ফাঁস।
আরও পড়ুন- স্বাধীনতা দিবসের আগে কড়া নিরাপত্তা শহরে, বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় ওড়ানো যাবে না ফানুস-ড্রোন

ক্ষুদিরামকে সেই মঞ্চে তাঁকে নিয়ে এসেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের চার পুলিশ। ক্ষুদিরাম ছিলেন তাঁদের সামনে। ফাঁসির আগে উপস্থিত আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলেছিলেন তিনি। তারপর পিছমোড়া করে বাঁধা হয় দুইহাত। গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো মাত্র জল্লাদকে শহীদ শুদিরাম প্রশ্ন করেছিলেন 'ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?' এটাই ছিল বীর শহিদের জীবনের শেষ কথা। জল্লাদ বিস্ময়ে কিছু বলতে পারেননি। বিসময়ে হতবাক হয়েগিয়েছিলেন ব্রিটিশ জেলার থেকে উপস্থিত সকলে। ফাঁসির আগে কী করে কারোর মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে?

১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মেদিনীপুর জেলার মোহবনী গ্রামে জন্মেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। তিন কন্যার পর তিনি ছিলেন চতুর্থ সন্তান। আগেই দুই পুত্র জন্মের পরপরই মারা গিয়েছিলেন বলে  তাঁর মা লক্ষীপ্রিয় দেবী ক্ষুদিরামও দ্রুত মারা যাবেন বলে ভয় পেয়েছিলেন। সেই কারণেই নিজের দিদির কাছে বিক্রী করে দিয়েছিলেন পুত্রকে। তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর এই ছেলে অন্য ধাতুতে গড়া। মৃত্যুর ১১১ বছর পরেও স্বাধীন ভারতের মানুষের মনে যিনি আজও অমর।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

New Alipore-এ বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে ছাই একাধিক ঝুপড়ি, আগুন নেভাতে মরিয়া দমকল
‘Mamata Banerjee আজ TMC-র মুখ্যমন্ত্রী আছেন কাল জামাতের মুখ্যমন্ত্রী হবেন’ বিস্ফোরক Sukanta Majumdar
সৎ বাবা না পাষণ্ড! কাণ্ড দেখে আঁতকে উঠবেন আপনিও! | South 24 Parganas News Today
'বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হচ্ছে', বিস্ফোরক মন্তব্য Adhir Ranjan Chowdhury-র
Live : সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কী অভিযোগ, দেখুন সরাসরি #adhirranjanchowdhury