লকডাউনে শ্রমিকদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন তিনি
এই করোনা যোদ্ধাকেই বেধড়ক মার কেতে হল
অপরাধ এক যুবক-যুবতীর প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতায় বাধা দিয়েছিলেন
মুম্বই-এর ঘটনা
লকডাউনে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। এই সুযোগে মুম্বইয়ের সেভরি এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তাতেই শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন এক যুবক-যুবতী। এরমধ্যে এসে বাগড়া দেন এক পাড়াতুতো মাসি। আর তাতেই খেপে গিয়ে প্রথমে ওই যুবতী এবং পরে তার বাড়ির লোকজন এসে ওই মাঝবয়সী মহিলাকে বেধড়ক মারধোর করেছে বলে অভিযোগ। এই দম্পতির মুখোমুখি হওয়ার এবং জনসাধারণের সাথে অন্তরঙ্গ না হওয়ার কথা বলার পরে এই মহিলাকে আক্রমণ করা হয়েছিল।
জানা গিয়েছে যুবতী ও তার পরিবারের হাতে আক্রান্ত ওই মাঝবয়সী মহিলার নাম মমতাজ কাদির শেখ। লকডজাউনের মধ্যে এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকদের খাওয়ানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। গত ২ মে রাত ৮ টা নাগাদ তিনি ওই পরিযায়ী শ্রমিকদেরই খাবার দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। খাদ্য বিতরণ অভিযানের সময় তাঁর সঙ্গে আরও অনেক লোক ছিলেন। কিন্তু তারপর মমতাজ-এর সহকর্মীরা সকলে চলে যান। একাই ফিরছিলেন তিনি।
সেই সময়ই সেভরি এলাকায় মমতাজ শেখ লক্ষ্য করেছিলেন এক অল্পবয়সী দম্পতি প্রকাশ্য রাস্তাতেই অন্তরঙ্গতায় মেতেছে। এমনিতে প্রকাশ্যে অন্তরঙ্গতা অত্যন্ত অশোভন, তার উপর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় যখন সামাজিক দূরত্ব বদায় রাখতে বলা হচ্ছে তখন এই ধরণের ঘনিষ্ঠতা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সাবধান করার জন্যই তাদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন মমতাজ শেখ। কাছাকাছি যেতেই দেখেছিলেন মেয়েটি আবার তাঁর পরিচিত, তাঁর বাড়ির কাছেই থাকে।
ব্যাস, আরও জোর পেয়ে মমতাজ সেখ গিয়েছিলেন ওই দম্পতির ঘনিষ্ঠতায় বাধা দিতে। মমতাজ শেখের অভিযোগ, অন্তরঙ্গতায় বাধা পেতেই মেজাজ হারিয়েছিল মেয়েটি এবং তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। জবাবে মমতাজ শেখ-ও দু-এক কথা শুনিয়ে দেন মেয়েটিকে। এরপরই তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল মেয়েটির সঙ্গে থাকা যুবকটি। মমতাজ শেখের অভিযোগ, ২২ বছরের যুবকটি আচমকাই তার গলা চেপে ধরেচিল, এবং তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে শুরু করে।
এরমধ্যে মেয়েটি আবার তার ভাই, মা ও কাকিমাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনে। তারাও এসে মমতাজ শেখ-কে ধরে বেধড়ক মারধর শুরু করেছিল বলে অভিযোগ। মমতাজ শেখ এই পর্যায়ে আর্তনাদ করতে শুরু করেছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন সেই চিৎকার শুনে এসে তাঁকে উদ্ধার করে। তাঁকে অভিযুক্তদের হাত থেকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর অভিযুক্তরা ওইকান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আর স্থানীয়রা মম্তাজ শেখ-কে জেজে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মমতাজ শেখ তাঁর স্বামীকে ফোন করে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। এররপর মমতাজ শেখ ও তাঁর স্বামী সেভরি থানায় গিয়ে এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিয়োগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তাদের সেভরি থানায় ডেকেও পাঠানো হয়। ইন্সপেক্টর গজানন খুড়হাদ বলেছেন, 'আমরা এখন মহামারি নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। তাই তাদের থানায় ডেকে এনে শুধু বোঝানো হয়েছে। কয়েক ঘন্টা পর অভিযুক্তদের মুক্তিও দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত চলছে। প্রয়োজন বুঝলে তাদের আমরা গ্রেফতার করব'।