ভিক্ষে করে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, এমন গল্প আমরা আগেও শুনেচ্ছি। এবার সম্পত্তির জন্য খুন হতে হল এক ভিখারিনীকে। ঘটনাস্থল মায়ানগরী মুম্বই। পুত্রবধূর হাতে খুন হলেন সঞ্জনা পাতিল নামের ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধা।
জানা যাচ্ছে মাঝে মধ্যেই শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া হত ৩২ বছরের পুত্রবধূর। এবার সম্পত্তির লোভে শাশুড়িকে একেবারে খতম করে দিলেন ওই মহিলা। গত সোমবার বৃদ্ধাকে শৌচালয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে রাজাওয়াদি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি ছিল তিনি পা পিছলে শৌচালয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশি তদন্তে উঠে আসে আসল সত্যি। জানা যায় বৃদ্ধির ছেলে দীনেশ পাতিলের স্ত্রী অঞ্জনাই খুন করেছে শাশুড়িকে।
পেশায় ভিখারিনী সঞ্জনা পাতিলের স্বামী কয়েকবছর আগেই মারা যান। ওই দম্পতির কোনও সন্তান না থাকায় দীনেশকে দত্তক নিয়েছিলেন সঞ্জনা। দীনেশ সম্পর্কে ছিলেন বৃদ্ধার স্বামীর ভাইয়ের ছেলে। ভিক্ষে করলেও মুম্বইয়ের মত শহরে ৪টি ফ্ল্যাটের মালিক ছিলেন সঞ্জনা। এর মধ্যে দুটি চেম্বুরে এবং দুটি ওয়ার্লিতে। সঞ্জনা ৩টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছিলেন। চতুর্থটিতে দত্তক পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে থাকতেন তিনি। এই ফ্ল্যাটটি ছিলে মুম্বইয়ের চেম্বুরের পেস্টাম সাগর কলোনীতে। বৃদ্ধা ৪টি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া সত্বেও ঘাটকোপার এলাকায় একটি জৈন মন্দিরের বাইরে ভিক্ষা করতেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সঞ্জনাকে দ্রুত রাজাওয়াদি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিবার দাবি করে যে সে বাথরুমে পড়েছিল। তবে সঞ্জনার শরীরে প্রায় ১৪ টি আঘাত দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। তার ঘাড়েও ছিল আঘাতের চিহ্ন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ হত্যার মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু হয়। জানা যাচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বৃদ্ধার পুত্রবধূ তদন্ত আধিকারিকদের সহযোগিতা করেননি।
পুলিশ এরপর সঞ্জনার নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ছোট মেয়েটি জানায়, সেদিন সকালে মায়ের সঙ্গে ঠাকুমার ঝামেলা হয়েছিল। জানা যায়, বৃদ্ধি ভিক্ষে করা অর্থ লুকিয়ে রাখতেন। তাই নিয়েই পুত্রবধূর সঙ্গে তার ঝগড়া লেগে থাকত। এরপরে অভিযুক্ত পুত্রবধূর পোশাকের অভ্যন্তর থেকে বৃদ্ধার সোনার অলঙ্কার খুঁজে পায় পুলিশ।
জানা যায় সেদিন ঝগড়া একটাই চরম আকার নিয়েছিল যে পুত্রবধূ অঞ্জনা প্রথমে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে সঞ্জনাকে মারধর করে। এরপর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বৃদ্ধা শাশুড়িকে। বৃদ্ধার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ না করা পর্যন্ত মোবাইল চার্জার গলায় জড়িয়ে রাখা হয়। দীর্ঘক্ষণ পুলিশি জেরায় শেষপর্যন্ত ভেঙে পড়েন অঞ্জনাদেবী। ঘন ঘন ঝগড়া অশান্তির জেরেই একাজ তিনি করেছেন বলে স্বীকার করেন। পাশাপাশি বৃদ্ধার ৪টি ফ্ল্যাটে নিজের মালিকানা জমানোর ইচ্ছাও তার কাজ করেছিল বসে জানিয়েছেন অভিযুক্ত পুত্রবধূ।