
মুক্তিযুদ্ধ আর পাকিস্তান নিয়ে বহু বহু বছর আগেই ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর বন্ধস্থানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে যা খুবই প্রাসঙ্গিক। বহু বছর আগেই কাস্ত্রো জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নকে যদি মুজিবর রহমান বাস্তব করতে চান তাহলে অবশ্যই তাঁদের এই কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে হবে। না বাংলাদেশ গঠনের আগেই তা ধ্বংস হয়ে যাবে। কাস্ত্রো তাঁর পরামর্শ মূলত পাকিস্তানপন্থী অফিসারদের নিয়েই দিয়েছিলেন।
কাস্ত্রো সেই কয়েক বিশ্বনেতাদের মধ্যে ছিলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সেই সময় সবথেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিবেন। কাস্ত্রো বলেছিলেন, মুজিবর হিমলায় দেখেছেন কিন্তু তিনি দেখেননি। যদিও বিপ্লবী কাস্ত্রোর পরামর্শ কানে তোলেননি মুজিবর। কাস্ত্রো মুজিবরকে বলেছিলেন, যেসব সরকারি কর্মী, আধিকারিক বা বড় কর্তা- মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন বা বিরোধিতা করেছিলেন তাদের প্রতি উদারতা দেখানো উচিৎ হবে না। উদারতা দেখালে সংশ্লিষ্টরা মুজিবরকে দুর্বল মনে করবেন, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টোপথে হেঁটেছিলেন মুজিবর। তিনি মনে করছেন, তাঁর প্রশাসনে পাকিস্তানপন্থীদের স্থান দিয়ে শীর্ষপদে বসেয়ে তাদের আস্থা করবেন করবেন, বিশ্বাস অর্জন করবেন। কিন্তু আদতে তা হয়নি।
যদিও বঙ্গবন্ধু কাস্ত্রোর সতর্কবানী কানে না তোলার ফল পেয়েছিলেন হাতেনাতে। তিনি যখন পাকিস্তানপন্থীদের কাছে ধাক্কা খেতে শুরু করেন তখন তিনি ঘনিষ্টদের কাছে স্বীকার করে নেন গুরুত্বপূর্ণ আমলাতান্ত্রিক পদে প্রবাসীদের নিয়োগ করে তিনি একটি বড় ভুল করেছেন। তিনি স্বীকার করেন যে তিনি অবিশ্বস্ত পাকিস্তানি উপকরণ দিয়ে তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন এবং স্বীকার করেন যে এটি ছিল তার জীবনের 'সবচেয়ে খারাপ ভুল'।
কাস্ত্রো একজন বিল্পবী। কিউবার স্বৈরশাসক ফুলজেনসিও বাতিস্তার বাহিনীর বিরুদ্ধে জঙ্গলে লড়াই করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুদের থেকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক শত্রুদের সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন। বাতিস্তা শাসনকে উৎখাত করার পর, কাস্ত্রো তার বিপ্লবী সরকার থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বৈরশাসক বাতিস্তার অনুগত বা সমর্থক সকলকে বিতাড়িত করেছিলেন কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানতেন যে পূর্ববর্তী শাসনের অবশিষ্টাংশ ধরে রাখার অর্থ হল প্রতিবিপ্লবের ধারণার অঙ্কুরোদগম করা।
কাস্ত্রো বিপ্লবী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন, যেখানে বিপ্লবী সরকারগুলির ক্ষমতায় আসার সময়, পরাজিতদের সরকার থেকে দূরে রাখা হল। বিজয়ী এবং পরাজিত উভয় শক্তিই একই ছাতার নীচে একই ব্যবস্থায় সহাবস্থান করতে এবং কাজ করতে পারে না কারণ তারা পারস্পরিকভাবে অসঙ্গত ছিল। কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে সতর্কও করেছিলেন যে সিআইএ'র চক্রান্তের প্রতি তার সতর্ক থাকা উচিত কারণ 'তাকে ধরার জন্যই এটি তৈরি হয়েছিল।'
কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যপথে হেঁটে বঙ্গবন্ধী বিশেষ বিমানে করে ঢাকায় প্রত্যাবাসনকারীরা আসতে শুরু করলে তাদের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন। যাদের মধ্যে প্রথমজন ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন, যিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের একমাত্র সর্বোচ্চ পদমর্যাদার বাঙালি কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন পাকিস্তানের বৃহত্তম পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং পশ্চিম ফ্রন্টে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের পর তাঁকে পরিবারের সঙ্গে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
বিশেষ দ্রব্যষ্টঃ মানস ঘোষের লেখা মুজিবের ভুল: তার হত্যার পেছনের শক্তি এবং চক্রান্ত বই থেকে পাওয়া।