জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছে, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আনুমানিক ৬ হাজার ভাষার মধ্যে অন্তত ৪৩ শতাংশ বিপদের মধ্যে রয়েছে। ভারতে মোট ১২১ ধরনের ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি সংবিধানের অষ্টম তফসিলের এ অংশে উল্লেখ রয়েছে। বাকি ৯৯টির উল্লেখ রয়েছে বি অংশে। এর পাশাপাশি ভারতে ২৭০টি মাতৃভাষাও রয়েছে।
প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি (21 February) পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানাবিধ ভাষা (Language) ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে একসূত্রে গেঁথে তুলতে রাষ্ট্রপুঞ্জ এমন একটি দিনের প্রচলন শুরু করে। ভাষা শুধুমাত্রই যোগাযোগের (Communication) মাধ্যম নয়, এটি সংস্কৃতির একটি অংশ। চলতি বছর ভাষা দিবসের থিম হল, 'বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ'।
জাতিসংঘের (United Nations) তরফে বলা হয়েছে, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে আনুমানিক ৬ হাজার ভাষার মধ্যে অন্তত ৪৩ শতাংশ বিপদের মধ্যে রয়েছে। ভারতে মোট ১২১ ধরনের ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি সংবিধানের অষ্টম তফসিলের এ অংশে উল্লেখ রয়েছে। বাকি ৯৯টির উল্লেখ রয়েছে বি অংশে। এর পাশাপাশি ভারতে ২৭০টি মাতৃভাষাও রয়েছে।
আরও পড়ুন- করোনায় আক্রান্তদের আইসোলেশনে থাকার প্রয়োজন নেই, জারি হচ্ছে নয়া নির্দেশিকা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে স্মরণ করে সারা পৃথিবী জুড়ে মাতৃভাষার অধিকার ও সম্মানরক্ষার জন্য এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালিত হয়। এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলনে বাংলাদেশের রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম। কানাডায় বসবাসকারী এই দুই বাঙালি ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপুঞ্জের তৎকালীন মহাসচিব কোফি আন্নানের কাছে একটি আবেদনপত্র পেশ করেন। তাতে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার দাবি জানান তাঁরা। এর পরে ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব এনেছিল। এই প্রস্তাব ভারত, ইরান, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি ২৭টি দেশ সমর্থন জানায়। ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় প্রস্তাবটি পাস হয়। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন- আচমকা অসুস্থ রানী এলিজাবেথ, চমকে যাওয়ার মত খবর দিল বাকিংহাম প্যালেস
বাংলাদেশের জন্ম
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সবচেয়ে বড় শরিক হল বাংলাদেশ। কারণ ১৯৫২ সালের এই ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল। ১৯৪৭ সাল থেকে পূর্ববঙ্গের বাংলাভাষী মানুষদের উপর পাকিস্তান সরকারের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি চালানোর ফলে শহিদ হন আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান। এরপর থেকে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে যোগদান করে, শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত বনধ, অবরোধ, হরতাল। এদের আত্ম বলিদানের পরেই পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এবং ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান পাস হয়, যেখানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই পাকিস্তান সরকার উর্দুর সঙ্গে বাংলাভাষাকেও পূর্ববঙ্গে স্বীকৃতি দেয়। আর পূর্ববঙ্গের জনগণের পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য হল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের এই ইতিহাসকে সম্মান জানিয়েই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
আরও পড়ুন- ইউক্রেন সংকট মেটাতে রাজি রাশিয়া ও ফ্রান্স, পুতিন-বাইডেন বৈঠকের সম্ভাবনা