তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের ওপর যে বেজিংয়ের নজর রয়েছে সেই বিষয়টি কারও অজানা নয়। চিনের এই আগ্রাসন রুখতে এবার নিজেদের পাসপোর্টের নক্সাই বদলে ফেলল এই দ্বীপরাষ্ট্র। নতুন পাসপোর্ট স্বশাসিত দ্বীপরাষ্ট্রটির স্বতন্ত্র পরিচয়কে আরও বড় আকারে হাজির করবে বলেই জানিয়েছে তাই প্রশাসন।
চিনের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নামের মিল থাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। করোনাভাইরাস মহামারির আবহে পাসপোর্টে লেখা তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম নিয়ে দ্বীপটির নাগরিকদের অন্য দেশে ঢুকতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সেইসময় চিনা নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে নানান বিধিনিষেধ ছিল। স্বশাসিত দ্বীপটির আগের পাসপোর্টের কভারে ইংরেজি হরফে বড় করে ‘রিপাবলিক অব চায়না’ লেখা ছিল, ‘তাইওয়ান’ লেখা ছিল নিচের দিকে। কিন্তু নতুন পাসপোর্টের প্রচ্ছদে একনজরে দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘রিপাবলিক অব চায়না’ শব্দটি নজরেই পড়বে না।
বুধবার প্রকাশিত নতুন পাসপোর্টে ইংরেজিতে লেখা ‘তাইওয়ান’ শব্দটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বোল্ড ফন্টে লেখা হয়েছে ‘তাইওয়ান’ শব্দটি। নতুন প্রচ্ছদে চীনা ভাষায় ‘রিপাবলিক অব চায়না’ শব্দগুলো আগের নকশার মতোই পাসপোর্টের ওপরেই রাখা হয়েছে। তবে তার নিচেই থাকা ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামটির ইংরেজি ভার্সন সরিয়ে একটি ছোট বৃত্তের মধ্যে লেখা হয়েছে।
পাসপোর্টের নতুন ভার্সনের বিষয়ে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ বলেছেন, নতুন প্রচ্ছদে আগের সব কিছুই রাখা হয়েছে। তবে আমরা নতুন পাসপোর্টে তাইওয়ান শব্দটির ওপর জোর দিয়েছি। তাইওয়ানের নাগরিকদের ভুল করে চিনের নাগরিক ভাবা বন্ধ করতেই নতুন পাসপোর্টটি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বশাসিত দ্বীপটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ।
করোনা মহামারির শুরুর দিকে চিনের নাগরিকদের অন্যান্য দেশে ঢোকার সময় নানা ধরনের বিধিনিষেধের মুখে পড়তে হয়েছিল। পাসপোর্টে কাছাকাছি নাম থাকায় তাইওয়ানের নাগরিকদেরও অনেক ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে, বলেন উ। তাইওয়ানকে চিন নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ বলেই দাবি করে, স্বশাসিত দ্বীপটি স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করলে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগেরও হুমকি দিয়ে রেখেছে বেজিং।
আরও পড়ুন: ভারতের 'উলট পুরাণ' প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, কোন জাদুতে ইমরানের দেশ হারাল করোনা মহামারিকে
দ্বীপটির পাসপোর্ট বদলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বেজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনইয়াং বলেছেন, তাইওয়ান যত ধরনের চেষ্টাই করুক না কেন, তারা যে চিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এই সত্য বদলাবে না।
চিনের সঙ্গে মিল থাকায় দাপ্তরিক নাম বদল নিয়ে তাইওয়ানের ভেতরেই গত কয়েক বছর ধরে তুমুল তর্ক বিতর্ক চলছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় তা আরও বেড়েছে। নক্সা বদলে ফেলায় আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ছাপা হওয়া নতুন পাসপোর্টে আর ইংরেজিতে বড় করে ‘রিপাবলিক অব চায়না’ লেখাটা থাকছে না, ‘তাইওয়ান’ থাকছে আগের চেয়েও বড় আকারে। স্বশাসিত এই দ্বীপটি এখন তাদের সবচেয়ে বড় ক্যারিয়ার চায়না এয়ারলাইন্সের নাম ও নক্সা বদলের কথাও বিবেচনা করছে বলে জানা যাচ্ছে। এশিয়াজুড়ে দিন দিন যেভাবে আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে বেজিং, তাতে রীতিমতো চিন্তায় তাইওয়ান। লাল ফৌজকে রুখতে তাই এবার নিজেদের সামরিক ক্ষেত্র পুনর্গঠনে জোর দিচ্ছে তাইওয়ান