ইমরান খানকে আদালতে পেশ করা হলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বলেন আপনাকে দেখে ভাল লাগছে। তারপরই জানিয়ে দেন ইমরানের গ্রেফতারি অবৈধ। তাই কোনও কারণ ছাড়়াই তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বড় স্বস্তি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার ইমরান খানের গ্রেফতারি বেআইনি বলে রায় দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। এই রায়ের পরই তাঁকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদিনই পাকিস্তানের জাতীয় অ্যাকাউন্টটেবিলিটি ব্যুরো বা National Accountability Bureau (NAB)কে রীতিমত ধকম দেয় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার ৭০ বছরের ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে গ্রেফতার করেছিল ন্যাব। বুধবার আদালত ইমরানকে ৮ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এদিনই পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ইমরান খানকে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয়। তারপরই মুক্তির কথা ঘোষণা করে।
ইমরান খানের গ্রেফতারি ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান। গোটা দেশ জুড়ে আসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি এতটাই অস্থির ছিল যে পাকিস্তান সরকারকে পঞ্জাব , খাইবার পাখতুনখাওয়া, বেলুচিস্থানে সেনা বহিনী মোতায়েন করতে হয়েছিল। হিংসার ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর তারা বিন্দিয়াল, বিচারপতি আলি মাজহার ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহরের বেঞ্চ ইমরান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়। এদিন আদালত যেভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তারও তীব্র সমালোচনা করে। গত বছর এপ্রিল মাসে ইমরানকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। তারপর থেকেই পাকিস্তান সরকার একাধিক মামলায় তাঁকে হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ।
এদিন ইমরান খানকে আদালতে পেশ করা হলে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি বলেন আপনাকে দেখে ভাল লাগছে। তারপরই জানিয়ে দেন ইমরানের গ্রেফতারি অবৈধ। তাই কোনও কারণ ছাড়়াই তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি আদালত ইমরান খানকে বলেছে, আইনের সাহায্য নিতে। হাইকোর্ট যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মেনে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা ও শান্তি বজায় রাখা প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতার কর্তব্য।
অন্যদিকে এদিন আদালতে দাঁড়িয়ে ইমরান খানও পাকিস্তানের প্রশাসনকে একহাত নেন। তিনি বলেন, তাঁকে এমনভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল যাতে মনে হয় তিনি একজন সন্ত্রাসবাদী। তিনি আরও বলেন সশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার সময়ই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি হিংসার শিকার বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তাঁকে দায়ি করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি কী করে দায়ী হতে পারেন। কিনি আরও বলেছেন, তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাঁর সমর্থন ও অনুগামীকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি শুধু নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ইমরানের আইনজীবীরে আদালতের বাইরে জানিয়েছেন, মুক্তির পরেই তাঁকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয়নি আদালত। সুরক্ষার জন্য পুলিশের গেস্টহাউসে রাতে থাকবেন। শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে তাঁকে যেতে হবে। আদলত আরও ১০ জনের সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অমুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি আদালত পাকিস্তান প্রশাসনকেও বলেছে, ইমরান পুলিশ গেস্ট হাউসে অতিথি হিসেবেই থাকবে। তাঁর সুরক্ষার পুরো দায়িত্ব পাকিস্তান প্রশাসনের। তিনি সেখানে বিশ্রাম করতে ও ঘুমাতে পারবেন। সব কিছু দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। ইমরান খানের দল পিটিআইও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।