
আফগান-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই এক আফগান তালেবান কর্মকর্তা পাকিস্তানকে প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন। একটি সামরিক কুচকাওয়াজে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ হলে তিনিই প্রথম আত্মঘাতী বোমারু হবেন। ওই আফগান তালেবান স্পেশাল ফোর্সের কর্মকর্তা পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, আফগানিস্তানে আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা বাড়ছে, ঠিক তখনই এই তালেবান কর্মকর্তার মন্তব্য সামনে এল। গত মাসে দুই দেশ এক সপ্তাহ ধরে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে উভয় পক্ষের অনেক সেনা নিহত হয়।
সামরিক কুচকাওয়াজের সময় ওই তালেবান কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের উচিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়ানো। তিনি আরও বলেন যে তালেবান শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত এবং এটিকে একটি আত্মত্যাগমূলক কাজ বলে অভিহিত করেন। এই কর্মকর্তাকে একজন 'ফিদায়ি' প্রশিক্ষক বলা হয়। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে সিনিয়র তালেবান নেতারাও আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে আক্রমণ করতে প্রস্তুত।
গত মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনী কাবুল এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য অংশে বিমান হামলা চালালে পাকিস্তান ও আফগান তালেবানের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, তালেবানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফরের প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছিল। এটি ছিল কোনো তালেবান কর্মকর্তার প্রথম আনুষ্ঠানিক ভারত সফর। পাকিস্তানের হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে আফগান তালেবানরা ডুরান্ড লাইন পেরিয়ে পাকিস্তানি সেনাচৌকিতে হামলা চালায়।
তালেবান যোদ্ধাদের হামলার পর দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সামরিক সংঘাত শুরু হয়। তালেবানদের দাবি, এই হামলায় ৫৯ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৯ জন সেনা নিহতের কথা স্বীকার করেছে। এক সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষের সময়, পাকিস্তান আফগানিস্তানের কান্দাহার এবং পাক্তিকা প্রদেশে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যাতে প্রায় ২০০ জন নিহত হয়। পাকিস্তান দাবি করেছে যে এই হামলাগুলি আফগান তালেবান এবং টিটিপি-র সঙ্গে যুক্ত ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। তবে তালেবানদের অভিযোগ, পাকিস্তান বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা হামলা চালিয়েছে, যাতে বহু নারী ও শিশু নিহত হয়েছে।
অবশেষে, ১৯ অক্টোবর কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দোহায় আলোচনার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। আলোচনার জন্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিনিধিরা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মিলিত হলেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি। আলোচনা অমীমাংসিত থেকে যায়। তবে, উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।