বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ভূগর্ভস্থ চির হিমায়িত অঞ্চলগুলো এখন যাচ্ছে গলে। বিজ্ঞানীদের ধারণা এইভাবে চলতে থাকলে ওই বরফের নিচে চাপা পড়া প্যাথোজেনগুলো আবার উঠবে জেগে , ছড়াবে সংক্রমণ।
'পারমাফ্রস্ট' - এটি হলো একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা অর্থ হলো ভূগর্ভস্থ চির হিমায়িত অঞ্চল।মাটির নিচে বছরের পর বছর বরফে ঢাকা এই অঞ্চলগুলি সাধারণত দেখা যায় রাশিয়ার সাইবেরিয়াতে। সাইবেরিয়ার কনকনে ঠান্ডায় মাটির নিচে জমা হতে থাকে একের পর এক বরফের স্তর।আর এই স্তরগুলির মাঝেই হিমায়িত জীবাশ্ম হয়ে থাকে আদিম পৃথিবীর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বেশ কিছু নিদর্শন। এই রহস্যময় 'পারমাফ্রস্টগুলি' বরাবরই ছিল প্রাণিবিজ্ঞানীদের আগ্রহের খনি। প্রাণী বিজ্ঞানীরা বরাবরই এই জায়গাগুলোতে যান নতুন কিছুর সন্ধান পেতে। তাই সাইবেরিয়ার এই পারমাফ্রস্টগুলোও ছিল সারাবিশ্বের প্রাণী বিজ্ঞানীদের আকর্ষণকেন্দ্র । কিন্তু সেই আকর্ষণে এবার বাঁধ সাধলো বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়নের দাপটে এই 'পার্মাফ্রস্টগুলি' এখন যাচ্ছে গলে। আর সেই কারণেই এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে পরিবেশবিদদের।
অনেক প্রাণিবিজ্ঞানী আবার এই বিষয়টিকে মানব সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলেও ইঙ্গিত করেছেন । গবেষকদের মতে এই পারমাফ্রস্টগুলোর নিচে এতদিন ঘুমিয়ে ছিল প্রায় দুই ডজন ভাইরাস। বরফ গলে যাওয়ার কারণে এরা ফের পুনরুজ্জীবিত হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞমহলের।এবং এরা যদি একবার জেগে ওঠে তাহলে ভাইরাঘটিত রোগে মানুষের সংক্রমণ হবার আশঙ্কা বাড়তে পারে জানিয়েছেন প্রাণিবিজ্ঞানীদের। এনিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে গবেষণা। এবং বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৩ টি প্যাথোজেন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এবং প্রাণী বিজ্ঞানীরা তাদের 'জোম্বি ভাইরাস' বলে অভিহিত করেছেন।
এমনকি পারমাফ্রস্ট গোলে যাওয়ার ফলে এর মধ্যে আটকে থাকা গলিত মিথেন গ্যাস বেরিয়ে এসে পরিবেশ দূষণও করবে বলে আশংকা প্রাণিবিজ্ঞানীদের। যদিও ওই সুপ্ত প্যাথোজেনগুলোর উপর মিথেনের কোনো প্রভাব পরে না, তবুও মিথেনের মতো ক্ষতিকারণ গ্রিন হাউস গ্যাস যদি পর্যাপ্ত পরিমানে মুক্ত হয় তবে তা জলবায়ুর উপরে বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা প্রাণী বিশেষজ্ঞদের।
রাশিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্সের গবেষকদের দল অবশ্য জানিয়েছেন যে এই ভাইরাগুলি মুক্ত হলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ এরা শুধুমাত্র অ্যামিবাদেরই সংক্রমিত করতে পারবে। তবু এ ধারণা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছেন সম্প্রতি ওই অঞ্চলে কর্মরত এক বিজ্ঞানীর দল।
আরও পড়ুন
FIFA World Cup: বিশ্বকাপ ফুটবলের বলি ৪০০-৫০০ পরিযায়ী শ্রমিক, জানাল কাতারের কর্মকর্তা