করোনা আতঙ্কে ছেলেকে খুন করলেন আশি ছুঁইছুঁই বাবা, মর্মান্তিক এই খবরে বাকরুদ্ধ কলকাতা

  • করোনাভাইরাসের জেরে এবার খুন
  • বাবার হাতেই খুন হতে হল ছেলেকে 
  • পরে নিজের ভুল বুঝতে পরে আত্মসমপর্ণ বাবার
  • মর্মান্তিক এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে কলকাতাকে 

ঘরের মধ্যে মলিন বিছানায় শুয়ে ছটপট করছেন গৃহিনী। দীর্ঘরোগভোগে তিনি শয্যাশায়ী। ১৪ বছর ধরে ওঠার ক্ষমতাও নেই। বাকশক্তিও প্রায় হারিয়েছেন। সেভাবে চিৎকার করতে পারেন না। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন ঘরের মধ্যে কী বয়ে যাচ্ছে। কারণ, ঘরের মধ্যে তখন বাবা ও ছেলের মধ্যে প্রবল বিরোধ চলছে। গৃহিনী দেখতে পাচ্ছেন তাঁর আশি ছুঁই-ছুঁই স্বামীর হাতের দড়িটা। যা প্রতিবন্দ্বী ছেলেটির গলা পেচিয়ে বসে গিয়েছে। আস্তে আস্তে ছেলের দেহটা নিথর হয়ে যেতে দেখলেন চোখের সামনে। শনিবার রাতের এই মর্মান্তিক ঘটনা খোদ কলকাতার বুকে। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানা এলাকায়। 

আরও পড়ুন- আপনি কি নরেন্দ্রপুর থানা এলাকায় বাস করেন, তাহলে দেখে নিন কোন-কোন এলাকা সিল করা হয়েছে

Latest Videos

কলকাতার ৭০০০৫ নম্বরের এই পিনকোডে ১ই শোভাবাজার লেনের বাড়িটিতে যে কতবড় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে তা শনিবার সন্ধ্যায় আঁচ করতে পারেননি প্রতিবেশীরা। যখন বাড়ির গৃহকর্তা ৭৮ বছরের বৃদ্ধ বংশীধর মল্লিক বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান তখন সকলে জানতে পারেন। এরপর প্রতিবেশীরা ওই বৃদ্ধকে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন।  

আরও পড়ুন- 'নন্দীগ্রামে সিপিএমের মতো অবস্থা, করোনায় লাশ গায়েব করছে তৃণমূল'

বৃদ্ধ বংশীধর এরপর শ্যামপুকুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। থানায় অফিসাররাও করোনার এই আতঙ্কে এভাবে বাবার হাতে ছেলের খুনের খবর পেয়ে অবাক হয়ে যান। সবচেয়ে বেশি অবাক হওয়ার পালা  আসে যখন বংশীধর জানান যে মাস্ক পরা নিয়ে বচসার জেরে তিনি ছেলে-কে খুন করেছেন। বংশীধর-ই নাকি জানান, যে সন্ধে থেকেই মাস্ক পরা নিয়ে বছর পঁয়তাল্লিশের ছেলে শীর্ষেন্দু-র সঙ্গে তাঁর গণ্ডগোল শুরু হয়। প্রতিবন্দী ছেলে শীর্ষেন্দু কিছুতেই মাস্ক পরতে চাইছিলেন না। বংশীধর নাকি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। মাস্ক না পরলে করোনাভাইরাস কীভাবে হামলা করতে পারে তাও বোঝান। কিন্তু, ছেলে শীর্ষেন্দু এইসব শুনেও মাস্ক না পরার জেদ নিয়ে বসে থাকেন। এই ঘটনা আস্তে আস্তে বচসা-তে গড়ায়। ছেলে-কে মাস্ক পরাতে ব্যর্থ বৃদ্ধ বংশীধর এরপর হাতে দড়ি নিয়ে ছেলের গলায় পেঁচিয়ে ধরেন। বংশীধরের স্ত্রী তখন সামনেই বিছানায় শোয়া। কিন্তু দীর্ঘরোগভোগে তিনি ১৪ বছর ধরে শয্যাশায়ী। কথাও প্রায় বলতে পারেন না। চিৎকার করে যে সাহায্য চাইবেন তারও উপায় ছিল না। চোখের সামনেই প্রতিবন্দী ছেলের শরীরের ছটপটানি স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখেন। ছেলের দেহ নিথর হয়ে যেতেই নাকি সম্বিৎ ফেরে বংশীধরের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাইরে বেরিয়ে প্রতিবেশীদের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। 

 

রাতেই বংশীধরের বাড়ি থেকে শীর্ষেন্দু-র দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। উদ্ধার করা হয় খুনে ব্যবহৃত দড়িটিও। শ্যামপুকুর থানার ওসি খোদ তদন্ত করেন। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে মানসিক অবসাদেই ছেলের জেদ ধৈর্যের বাধ ভেঙে দিয়েছিল বংশীধরের। আর সেই কারণে তিনি দ্বিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নৃশংস এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। করোনাআতঙ্ক কতটা প্রবলভাবে চেপে বসেছে তা এই ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে বলেও মনে করছে পুলিশ।  

আরও পড়ুন- রাজ্য়ে সোমবার থেকে খুলছে সরকারি অফিস, কারা যাবেন কর্মস্থলে

জানা গিয়েছে, এলাকায় ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি বলেই পরিচিতি বংশীধরের। কিন্তু, অসুস্থ স্ত্রী এবং প্রতিবন্দী ছেলেকে নিয়ে তিনি যথেষ্টই বিড়ম্বনার মধ্যে থাকতেন। তাঁর নিজেরও বয়স হয়েছে। ফলে, শয্যাশায়ী স্ত্রী-র দেখভাল এবং তারসঙ্গে বছর পঁয়তাল্লিশের প্রতিবন্দী ছেলের জেদে মাঝেমধ্যেই তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলতেন। কিন্তু, করোনার আতঙ্ক যেভাবে বাবা-র হাতে ছেলের প্রাণ নিল- নিশ্চিতভাবে কলকাতা তা দীর্ঘদিন খেয়াল রাখবে

Share this article
click me!

Latest Videos

Naihati-তে কার পাল্লা ভারী? ফল ঘোষণার আগে উত্তেজনা তুঙ্গে গোটা এলাকায় | Naihati By Election Results
'কয়লার ৭৫ ভাগ তৃণমূলের (TMC) পকেটে যায়' বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)
Bear Rescue Operation | বরফের মধ্যে ভাল্লুকের প্রান বাঁচাল ভারতীয় সেনা, দেখুন দুঃসাহসিক ভিডিও
Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul