এবার আর ঘুরিয়ে পেঁচিয় নয়। সরাসরি মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নাম করে সংঘাতের পথে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। টুইটারে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখলেন, রাজ্যপাল হিসেবে তিনি যে যে পদক্ষেপ করেছেন, তার সবটাই সংবিধান লিপিবদ্ধ রয়েছে। রাজ্যপালের এই বার্তার পরে যে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্কের আরও অবনতি হল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলেজ শিক্ষকদের সভায় মঙ্গলবারই ইউজিসি-র বেতনক্রম অনুযায়ী অধ্যাপকদের নতুন বেতনের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভাতেই তিনি অধ্যাপকদের উদ্দেশে বলেন, কোনও সমস্যা হলে অন্য কোথাও না গিয়ে সরাসরি রাজ্য সরকারের কাছেই আসতে। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকের খবর অনুযায়ী, সভার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের সঙ্গে সাক্ষাতেও একই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, অন্য কারও থেকে কোনও নির্দেশ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন- বাংলাতেই গোপনীয়তা নেই, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে মমতাকে জবাব রাজ্যপালের
আরও পড়ুন- উপনির্বাচনে অতীতের হিংসা চান না, ফের রাজ্যেকে খোঁচা রাজ্যপালের
মুখ্যমন্ত্রী যে এই নির্দেশের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সক্রিয়তা কমানোর চেষ্টা করছেন, রাজনৈতিক মহলের কাছে তা স্পষ্ট। কারণ রাজ্যপাল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে আসার পর থেকেই অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়েও অতিসক্রিয়তা দেখিয়েছেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে ছুটে গিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির খুঁটিনাটি বিষয়েও খোঁজ রাখছিলেন ধনখড়।
বেতন বৃদ্ধি নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠন জুটার কর্মবিরতির কথা জানতে পেরেও তৎপর হন রাজ্যপাল। রাজভবন থেকে ফোন করে ইউডিজি-র বেতনক্রম নিয়ে আলোচনা করার জন্য জুটার সদস্যদের ডেকে পাঠানো হয়। রাজ্যপালের এই সক্রিয়তা কমাতেই মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা হলে সরকারের কাছে আসার জন্য অধ্যাপকদের অনুরোধ করেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই কৌশলের কথা বুঝতে পেরেই বিষয়টি নিয়ে টুইটারের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। অধ্যাপক এবং উপাচার্যদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার কথা সংবাদমাধ্যমে জেনে রাজ্যপাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, 'আপনি কি বোঝাতে চাইছেন সেটা বুঝতে পারছি। রাজ্যপাল এবং আচার্য হিসেবে আমি যা যা করেছি, তার সবটাই সংবিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে।'
রাজ্যপালের টুইট।
রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা সরাসরি রাজ্যপালকে বিঁধে ইতিমধ্যেই নানা মন্তব্য করেছেন। প্রয়োজনে তাঁদের জবাবও দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। কিন্তু কখনওই রাজ্যপালকে উদ্দেশ করে করে কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন রাজ্যপালের বার্তার পরে মমতার সেই সৌজন্য বজায় থাকে কি না, সেদিকেই এখন রাজনৈতির মহলের নজর।
কালীপুজোয় সস্ত্রীক রাজ্যপাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবান্নের বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার হয়তো দু' পক্ষের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনার পারদ কিছুটা কমবে। তা তো হয়ইনি, উল্টে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও নতুন ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছেন রাজ্যপাল।