মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে তাকে প্রচণ্ড মারধর করেছিলেন হরিদেবপুরের নিহত যুবক অয়ন মণ্ডল। কীভাবে মগরাহাটে পৌঁছল তাঁর মৃতদেহ?
দশমীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন হরিদেবপুরের যুবক অয়ন মণ্ডল। বান্ধবী ও তার পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিশের হাতে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর, দশমীর রাতে ১১টা নাগাদ চূড়ান্ত মত্ত অবস্থায় বান্ধবীর রমাকান্তপুরের উদয়াঞ্চলের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন ওই যুবক। সেখানে যাওয়ার পর তিনি দেখেন যে, তাঁর বান্ধবী তখন বাড়িতে নেই। বান্ধবীকে বাড়িতে না পেয়ে অত্যন্ত বিরক্তি নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করতে শুরু করে দেন তিনি।
এরপর বান্ধবী বাড়িতে ফিরলে অয়ন তাঁকে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। ওই বান্ধবীর মা রুমা জানা তৎক্ষণাৎ ছুটে এসে নিজের মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন এবং তখন অয়ন তাঁকে ধরেও মারধর করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই সময় বান্ধবীর ভাই সকলের চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি মা ও বোনকে বাঁচানোর জন্য অয়নকে আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, কোনওভাবেই অয়নকে থামানো যাচ্ছিল না দেখে দিদি এবং মায়ের কথা শুনে ইট জাতীয় একটা ভারী বস্তু দিয়ে অয়নের মাথায় সজোরে আঘাত করে বান্ধবীর ভাই। তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অয়ন।
পুলিশ সূত্রে খবর, তখনই ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন অয়নের বান্ধবীর বাবা দীপক জানা। তাঁর পরামর্শ মেনে অয়নের বান্ধবীর ভাই নিজের দুই বন্ধুকে ডেকে পাঠায়। সেই দুই বন্ধু মিলে ২ হাজার টাকা দিয়ে কুঁদঘাট এলাকা থেকে একটি টেম্পো জাতীয় গাড়ি ভাড়া করে আনে। পণ্যবাহী ওই ‘ছোট হাতি’ গাড়ির ড্রাইভারকে বলা হয়েছিল যে, তাঁর গাড়িতে করে বাড়ির কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হবে।
কিন্তু, গাড়ির চালক যখন কুঁদঘাট থেকে গাড়ি নিয়ে হরিদেবপুর গিয়ে পৌঁছোন, তখনই তিনি অপরাধের আঁচ পেয়েছিলেন। তাঁর গাড়িতে মৃতদেহ তোলা হচ্ছে, এই কথা বুঝতে পেরে গিয়ে ওই ড্রাইভার তা নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন। তখন তাঁকে আরও অনেক বেশি টাকার প্রলোভন দেখায় অয়নের বান্ধবীর ভাই ও তাঁর বন্ধুরা। অত টাকার লোভে শেষমেশ রাজি হয়ে গেছিলেন ওই গাড়িচালক। এর পরেই অয়নের মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয় মগরাহাটের কাটপোলের কাছে করিমাবাদ এলাকায়। ওই জায়গা থেকেই পরেরদিন পুলিশ অয়নের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় নিহত অয়ন মণ্ডলের বান্ধবী, তাঁর মা এবং ভাইকে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জেরার মুখে খুনের অপরাধ স্বীকারও করে নিয়েছিলেন ৩ ধৃত। সম্পূর্ণ ঘটনা জেনে পুলিশ গ্রেফতার করে বান্ধবীর বাবা, বান্ধবীর ভাইয়ের এক বন্ধু এবং ওই পণ্যবাহী গাড়ির চালককে। শনিবার প্রত্যেককে আদালতে তোলা হবে।
কিন্তু, এর পরেও রয়েছে রহস্যের জাল। সূত্রের খবর অনুসারে সন্দেহ উঠছে যে, ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেও খুন করা হতে পারে অয়নকে। তাঁর এক বন্ধুর দাবি, শুধুমাত্র ওই বান্ধবীই নন, বান্ধবীর মায়ের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অয়ন মণ্ডল।
আরও পড়ুন-
গতিপথ ঘোরানোর চেষ্টাই কি মাল নদীর বিপর্যয়ের কারণ, নাকি, এর পেছনে লুকিয়ে আরও ভয়ঙ্কর বিপদ?
লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেগে থাকার বার্তা? জানুন 'কোজাগরী'-র প্রকৃত অর্থ
হরিদেবপুরে নিখোঁজ যুবকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হল বান্ধবী এবং তাঁর মা ও ভাইকে