এমনি পুজোর দিন আনন্দে মাততে পারেন না তাঁরা। একাদশীর দিন এলেই বদলে যায় চিত্রটা। পুজোয় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও একাদশীর দিন তিনটি পুজোকে ঘিরে আনন্দে মাতেন আদিবাসীরা। জঙ্গলের মধ্যে বসে মেলা। রাত পর্যন্ত চলে আদিবাসী নৃত্য। বর্তমানে এই মেলাই মিলন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
গ্রামের নাম বড়জোল। রামপুরহাট শহর থেকে মাত্র আট কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ঝাড়খণ্ড সীমান্তের এই গ্রামে। ১১০ বছর আগে বড়জোল গ্রামের মাঝে দুর্গা পুজো শুরু করেন গ্রামের কয়েকজন মানুষ। বড়জোল গ্রামের আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি আদিবাসী গ্রাম। তারা পুজোয় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও একাদশীর দিন প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় আদিবাসী এলাকা বেলপাহাড়ি সংলগ্ন নাককাটি বনে।
সেখানে মাচানের উপর প্রতিমা রেখে শুরু হয় আদিবাসী নৃত্য। কেবল আদিবাসীদের বিনোদনের জন্যই পুজোর শুরুর সময় প্রতিমা কয়েক ঘণ্টার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই আদিবাসী এলাকায়। সেই রীতি আজও চলে আসছে। বর্তমানে বড়জোলে আরও একটি পুজো বেড়েছে। বেলপাহাড়ি গ্রামেও একটি পুজো শুরু হয়েছে। ফলে এখন তিনটি প্রতিমাকে ঘিরে আনন্দে মাতেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। বড়জোল গ্রামের বাসিন্দা কিশোরী মোহন পাল,কৃষ্ণপদ মণ্ডল, রামকৃষ্ণ মণ্ডলরা বলেন, 'পুজোয় একটা দিন আদিবাসীদের আনন্দ দিতেই প্রতিমা জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে প্রতিমা মন্দির থেকে বের করে গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে। সেখানে আদিবাসীরা মা দুর্গাকে ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন।
পরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা নাঁচ পরিবেশন করেন। বিকেল থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য জঙ্গলের মধ্যে মেলা বসে। মেলায় মিষ্টি, পাপড়ের পাশাপাশি চুরি মালারও দোকান বসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাত ৯টার পর প্রতিমা গ্রামে ফিরিয়ে এনে কুন্তিপুকুরে নিরঞ্জন করা হয়।' লক্ষ্মীরাম হেমব্রম, দীনেশ টুডু, মলয় হাঁসদারা বলেন, 'এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। কয়েক ঘণ্টা প্রতিমা থাকে আমাদের দায়িত্বে। রাত পর্যন্ত আমরা তিনটি প্রতিমাকে ঘিরে আনন্দে মেতে থাকি।'