বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজার কাছে আচমকা যান্ত্রিক গোলযোগ হওয়ার কারণে হঠাৎ বিকল হয়ে গেল অ্যাম্বুলেন্স। সদ্য সার্জারি হওয়া রোগীকে কীভাবে উদ্ধার করলেন কলকাতা পুলিশের মানবিক কর্মী সুপ্রভাত ঘোষ?
শহরজুড়ে দেবীপক্ষের ঢাক বাজা শুরু হয়ে গেলেও অতর্কিত বিপদ যে সাধারণ মানুষকে ছেড়ে যায় না, তার এক জলজ্যান্ত উদাহরণের সাক্ষী থাকল কলকাতা। বিপদটি ঘটে ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল এগারোটা নাগাদ বিদ্যাসাগর সেতু, অর্থাৎ দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজের টোল প্লাজার নিকট এবং সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দিলেন এক পুলিশ কর্তা, যার তৎক্ষণাৎ উপস্থিত বুদ্ধি এবং মানবিকতা উজ্জ্বল করে তোলে সারা বাংলার পুলিশ কর্মকর্তাদের মুখ।
শনিবার সকালে বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজার কাছে আচমকা যান্ত্রিক গোলযোগ হওয়ার কারণে হঠাৎ বিকল হয়ে যায় একটি অ্যাম্বুলেন্স, গুরুতর সার্জারি হওয়া এক রোগীকে নিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্সটি যাচ্ছিল হাসপাতালের দিকে। সাথে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, ও ছেলে। মাঝপথে একেবারে প্রায় ফাঁকা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্স খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাঁদের এই অসহায় অবস্থার খবর পৌঁছে যায় নিকটস্থ মন্দিরতলা থানায়।
এই সংকটকালে থানার ডিউটিতে বহাল ছিলেন বিদ্যাসাগর সেতু ট্রাফিক গার্ডের মন্দিরতলা আউটপোস্টের সার্জেন্ট সুপ্রভাত ঘোষ। সূত্র মারফৎ তিনি বিপদের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি নিজে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন। বিপদগ্রস্ত রোগীর নাম স্বপন মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলের নাম পঞ্চানন মুখোপাধ্যায়। তাঁরা হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বড়গাছিয়ার বাসিন্দা। তাঁদের গন্তব্যস্থল কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। স্বপনবাবু সেখানে যাচ্ছিলেন তাঁর সার্জারি-পরবর্তী চেক আপ করানোর জন্য। সেসময়ে তাঁর চলনশক্তিও ছিল একেবারেই কম। পুলিশকর্তা সুপ্রভাত ঘোষ সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলে অসহায় পরিবার তাঁর কাছে আবেদন জানায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, একটি এসি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। কারণ, যেকোনও গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
দুর্ভাগ্যবশত কলকাতা পুলিশের তৎপর কর্মী সুপ্রভাত সেসময়ে জানতে পারেন যে, রোগী বা তাঁর পরিবারের কারোর কাছেই বিশেষ সুবিধাযুক্ত কোনও স্মার্ট ফোন নেই। সময় নষ্ট না করে নিজের ফোন থেকে নিজেরই ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অ্যাপ ক্যাব বুক করে ফেলেন তিনি। মিনিট কয়েকের মধ্যেই ঘটনাস্থলে চলে আসে এসি গাড়ি, যা রোগী পরিবহণের ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী ছিল এবং সার্জেন্ট সুপ্রভাত নিজেই রোগীকে সাহায্য করে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে অতি দ্রুততার সাথে স্বপন মুখোপাধ্যায়কে অ্যাপ ক্যাবে স্থানান্তরিত করে দেন।
হাসপাতালে পৌঁছে চেক-আপ করানোর পরেও অসহায় পরিবার ওই রোগীকে নিয়ে কীভাবে বাড়ি ফিরবেন যখন ভেবে পাচ্ছিলেন না, তখন ফের উদ্ধারের কাজে এগিয়ে আসেন মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় ডিউটিরত কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। কম খরচে রোগী ও তাঁর বাড়ির লোকদের নিশ্চিন্তে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন তাঁরা। দিনের শেষে কলকাতা পুলিশের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সার্জেন্ট সুপ্রভাত ঘোষকে ফোন করেন পঞ্চানন মুখোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে অসুস্থ স্বপন মুখোপাধ্যায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। সুপ্রভাত ঘোষ জানিয়েছেন, কলকাতা পুলিশের সদা-জাগ্রত কর্মী হিসেবে তিনি সবসময় মানুষের পাশটিতেই রয়েছেন।
আরও পড়ুন-
ইডেনে 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-কে বিদায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ ম্যাচে নামলেন ঝুলন গোস্বামী
‘আমার যাবার সময় হল, দাও বিদায়!’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা ফেসবুক পোস্ট, তৃণমূলের অন্দরে বেসুরো সমীর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বোধনের আগেই টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপে ঢুকে পড়ল ডেঙ্গি মশা, কামড় খেলেন চিত্র সাংবাদিকরা