বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'ঘর ওয়াপসি' হচ্ছে একাধিক তৃণমূল নেতার। পিছিয়ে থাকছেন না অনুগামীরাও। নেতার সঙ্গে সঙ্গে দলে ভিড়ছেন তারাও। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল নেতা কর্মীদের ঘরে ফেরার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। যদিও কালীঘাটে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে,দলে আগত এই পুরোতনদের নিয়েই চিন্তায় মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
ঘরের মধ্য়েই রয়েছে শত্রু। এখনই খুঁজে না বের করলে পরিস্থিতি হবে লোকসভা নির্বাচনের মতো। সূত্রের খবর, তড়িঘড়ি ঘাসফুলের 'গিরগিটি'দের খুঁজে বের করতে নির্দেশ এসেছে কালীঘাট থেকে। বিজেপির নির্দেশে কারা ঘরে ফিরছেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ দলের কোর কমিটির। তাই আগ বাড়িয়ে পুরোনোদের এখনই বড় দায়িত্ব না দেওয়ার পথে হাঁটছে ঘাসফুল ব্রিগেড। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সব 'ভেকধারীদের' দলে চাইছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো।
লকডাউন হচ্ছে না ১২ সেপ্টেম্বর, টুইট করে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচনের আগেও ঘটেছিল একই ঘটনা। দল বিপুল আসন পাবে বলে আশা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু ফল বেরোনোর পর দেখা গেল অন্য চিত্র। ৪২-এ ৪২ তো দূরের কথা, রাজ্য়ে ১৮ টা আসন পেল বিজেপি। যে দলের রাজ্য়ে সংগঠনই দুর্বল, তারা কীভাবে এই আসন পায় ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না মমতা। যদিও বিষয়টা পরিষ্কার করেন রাজ্য় বিজেপির 'চাণক্য' মুকুল রায়।
প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা জানান, দল ছাড়লেই মামলা দিচ্ছিল মমতার সরকার। রাজ্য়ে গণতন্ত্র বলে কিছু ছিল না। বিজেপিকে জেতাতে তাই তৃণমূলের নেতাদের 'ঘরে থেকেই' পদ্মে ছাপ দিতে বলেন তিনি। ঘাসফুলে থেকে এরা আসলে পদ্মফুলের কাজ করছিলেন। যার ফলও পাওয়া গিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে। মুকুল রায়ের এই দাবি যে অমূলক নয়, তা বীজপুরের এক তৃণমূলে নেতার কর্মকাণ্ডেই প্রকাশিত। বার বার দলের সঙ্গে সংঘাত হলেও দীনেশ ত্রিবেদীকে বিপুল ভোটে জেতানোর আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, ব্যারাকপুরের বিজেপির পার্থী অর্জুন সিং জয়লাভ করেছেন। এমনকী এই ফলের পরই দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি ও তার অনুগামীরা।
'রিয়া বাঙালি ব্রাহ্মণ মেয়ে ', সুশান্ত মামলায় মুখ খুললেন অধীর
এরকম একটা ঘটনা নয়, বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বঙ্গ রাজনীতি। লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লির এক বিজেপি নেতার মুখেও ছিল এই কথা,'শাসকদের পয়সায় খাও। কিন্তু ভোটটা বিজেপিকে দাও।' দলে নতুন করে এই পরিস্থিতি নিয়েই চিন্তায় পড়েছে টিম পিকে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্য়েই বিজেপিতে ভাঙনের খবর খাওয়ানো হচ্ছে রাজ্য়ের সাংবাদিকদের। 'তৃণমূলপন্থী' কিছু সাংবাদিক রোজই দিলীপ-মুকুল ব্রিগেডের সংঘাত নিয়ে খবর করে চলেছেন।
তৃণমূল থেকে আসায় বিজেপিতে মুকুলকে কর্তৃত্ব করতে দেবেন না, এটাই দিলীপ ঘোষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হওয়া উচিত। কিন্তু দিলীপবাবুও জানেন, রাজ্য় বিজেপিকে শক্তিশালী করতে মুকুল একটা বড় কার্ড। দীর্ঘদিন দলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' থাকার কারণে তৃণমূল ভাঙানো তার কাছে অতি সহজ কাজ। তাই এই ধরনের খবরে ঘি ঢালছেন না কেউ। উল্টে মুকুল নিজেই জানিয়েছেন, 'তৃণমূলে ফিরছি না'। একই ভাবে দিলীপের মুখেও শোনা গিয়েছে, 'দলে কোনও বিভাজন নেই'-এর মতো কথা।
এরই মধ্য়ে দিদির রক্তচাপ বাড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। শোনা যাচ্ছে, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনার পরও রাজ্য় রাজনীতির জল মাপছেন শুভেন্দু। দলের রদবদলের পর কদিন আগেই প্রথম বৈঠক ছিল তৃণমূলের কোঅর্ডিনেশন কমিটির। কিন্তু সেই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পরিবহণ মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের দাবি, দলে যোগ্য সম্মান পাননি শুভেন্দু। যার ফল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পড়তে বাধ্য।
পিসির রাজত্বে ভাইপোর কীসের ভয়,কঙ্গনা প্রসঙ্গে মহুয়াকে পাল্টা বাবুলের
এমনিতেই রাজ্য়ের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাকফুটে রাজ্য়। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে আমফান দুর্নীতি। পাল্টা বিজেপির দৌলতে 'চাল চোর' অভিযোগ শুনতে হচ্ছে দলকে। সঙ্গে দশ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া। সব মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পিকে-র পরিকল্পনা বিশ্বস্ত নেতাদের মধ্য়েই রাখতে চাইছেন নেত্রী। সেক্ষেত্রে 'হাতে ঘাসফুল-মনে পদ্মফুল' আঁকা নেতাদের আগে ভাগেই বিদায় দিতে চাইছেন তিনি।