বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বন্ধু। আর সেই বন্ধুর ফ্ল্যাটের সিঁড়ি থেকেই কুকুরের বেল্টের ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হল চোদ্দ বছরের কিশোরের দেহ। কৌশিক কানুনগো নামে ওই কিশোরকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা অভিযুক্ত বন্ধু এবং তার পরিবারও। অন্যদিকে পুলিশের বিরুদ্ধেও অসহযোগিতার অভিযোগে সরব হয়েছে মৃত কিশোরের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা।
গত বুধবার কেষ্টপুরের নজরুল পার্কের একটি আবাসনের পাঁচ তলার সিঁড়ির উপরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হয় কৌশিক কানুনগো নামে বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ওই আবাসনেই কৌশিকের এক বন্ধুর ফ্ল্যাট রয়েছে। অভিযোগ, তাদের বাড়ির কুকুরের বেল্টই লাগানো ছিল কৌশিকের গলায়।
জানা গিয়েছে, নিজের প্রতিবেশী ওই বন্ধুর ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল কৌশিকের। গত কুড়ি অক্টোবর ওই বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে হুক্কা পার্টিরও আয়োজন করা হয়েছিল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সেখানেই জোর করে কৌশিককে মদ্যপান করানো হয়। নিজের এক প্রতিবেশী কাকিমাকে কৌশিক নাকি সেকথা বলেওছিল। ঘটনার পরে কৌশিকের বাবা, মা তাকে পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে বকাবকি করেছিলেন। তাই নিয়েই কৌশিকের সঙ্গে পরিবারের কিছুটা মনোমালিন্য চলছিল।
আরও পড়ুন- পুরনো প্রেমকে ফিরে পেতেই কি বর্তমান প্রেমের হত্যা, নিমতাকাণ্ডে মিলছে এমনই ইঙ্গিত
আরও পড়ুন- পাঁচ মিনিটে কীভাবে তিন খুন, পুলিশকে দেখিয়ে দিল উৎপল
অভিযোগ, গত বুধবার কৌশিককে বোঝানোর নাম করে ওই প্রতিবেশী বন্ধুই তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পরে সন্ধের দিকে কৌশিকের বাবাকে ফোন করে ওই বন্ধুই জানায়, তাদের আবাসনের সিঁড়িতে ফাঁস লাগানো অবস্থায় কৌশিককে পাওয়া গিয়েছে। তড়িঘড়ি ছুটে গিয়ে অন্যান্য বাসিন্দাদের সাহায্যে গলার বেল্টের ফাঁস কেটে ছেলেকে উদ্ধার করেন শেখরবাবু। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে কৌশিককে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
কৌশিকের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলেই দাবি তাঁর পরিবার এবং প্রতিবেশীদের। এমন কী, তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রহস্য বাড়িয়ে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত বন্ধু এবং তার পরিবার গা ঢাকা দিয়েছে।
এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেও খারাপ ব্যবহার এবং তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, অভিযোগ জানাতে গেলে মৃত ছাত্রের বাবাকে বাগুইআটি থানা থেকে হুমকি দেওয়া হয়। থানা থেকেই নাকি তাঁদের বলা হয়, বাড়িতে বকাবকির কারণেই কৌশিক আত্মঘাতী হয়েছে। মৃত ছাত্রের প্রতিবেশী বেবী সাউয়ের দাবি, অভিযোগ জানাতে গেলে ছেলেকে মারধর এবং বকাবকির জন্য পাল্টা বাবা- মার বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে বলেও শেখরবাবুকে হুমকি দেয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে খুনের অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছাত্র এবং তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।