এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ডে এই মুহূর্তে শিরোণামে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পরেশ অধিকারী। এসএসসি দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশ সদ্য চাকরি হারিয়েছেন তার কন্যা অঙ্কিতা চৌধুরি।
এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ডে এই মুহূর্তে শিরোণামে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পরেশ অধিকারী। এসএসসি দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশ সদ্য চাকরি হারিয়েছেন তার কন্যা অঙ্কিতা চৌধুরি। তবে শুধু পরেশ অধিকারীই নন, রাজ্যে এই মুহূর্তে সিবিআই তলবে জেরবার শাসকদলের তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীরা। সিবিআই তলব পেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছোটেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রমী রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পরেশ অধিকারী। তিনি তেমনটা মোটেই করেননি। তিনি আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ভ্যানিস হয়ে গিয়ে ইয়োর্কার দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে চর্চা রাজনৈতিক মহলের। তবে মন্ত্রী পরেশের এই উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছেন এক 'ম্যাজিসিয়ান'।
কোচবিহারের ইন্দিরা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। তিনি ৪৩ মাস চাকরি করেছেন। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় শিক্ষাদফতর প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর। অভিযোগ, মেধা তালিকায় না থেকেও মন্ত্রীর মেয়ে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। এনিয়ে ববিতা সরকার নামে এক পরীক্ষার্থী মামলা করেছিলেন। ববিতার দাবি, তাঁর থেকে কম নাম্বার ছিল মন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর। তারপরেও নিয়োগপত্র হাতে পাননি ববিতা। অথচ ২০১৮ সালে মেখলিগঞ্জের একটি স্কুলে চাকরি পেয়ে যান অঙ্কিতা অধিকারী।
আরও পড়ুন, চাকরি গেল মন্ত্রী পরেশ কন্য়া অঙ্কিতার, ফেরাতে হবে পুরো বেতন, নির্দেশ হাইকোর্টের
শিলিগুড়ির কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা ববিতা সরকার ২০১৬ সালে স্কুল শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন।২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই তালিকায় অবশ্য ববিতার নাম প্রথম থেকে ২০ তেই ছিল। কিন্তু সেই তালিকা বাতিল করে দেয় এসএসসি। কিছুদিন পরে প্রকাশিত হয় নতুন তালিকা। নতুন তালিকায় ববিতার নাম ছিল ওয়েটিং লিস্টে।আর পুরোনো তালিকায় কোথাও না থাকা অঙ্কিতার নাম সংযোজনের অভিযোগ। তালিকায় একধাপ নীচে নামলেন কীভাবে, নতুন সংযোজনে অঙ্কিতাইবা কে। তা তখনও জানতেন ববিতা। পরে জানতে পেরেই শুরু হয় দৌড় ঝাঁপ। র ্যাঙ্কিয়ের কার্ঢ নিয়ে ধর্ণা মঞ্চ থেকে শুরু করে এসএসসি কর্তৃপক্ষ কোথাও যেতে বাদ রাখেননি ববিতা। এমন কি তথ্য জানার অধিকার আইনেও প্রশ্ন করেছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন তাঁর এবং অঙ্কিতার প্রাপ্ত নম্বর কত।ববিতা বিবাহিতা। দুই সন্তানের মা। গত পাঁচ বছর ধরে তাঁদের সামলে নিজেই লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। বিপক্ষে যখন প্রভাবশালী মন্ত্রী, তখন লড়াই যে কঠিন হবে, তা বুঝেছিলেন ববিতাও। কিন্তু হাল ছাড়েননি।
আরও পড়ুন, এসএসসি দুর্নীতি মামালায় ফের পরেশ অধিকারীকে তলব, উত্তরে সন্তুষ্ট নয় সিবিআই
অপরদিকে, একদা ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন পরেশ অধিকারী। রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। দল বদলে যখন ২০১৯ সালে তিনি তৃণমূলে এলেন, তখন তাঁর প্রভাব কমেনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, মেয়ের চাকরি সহ তিনটি শর্তেই তৃণমূলে এসেছিলেন পরেশ। পরে লোকসবা ভোটে হারলেও যখন বিধানসভা ভোটে জিতলেন , তখন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী করে দেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। এদিকে পরেশ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী হওয়ায় আরও কঠিন হয় ববিতার লড়াই। কিন্তু ৫ বছর পর সিবিআই-র ভয়ে পরেশকে যে পালিয়ে বেড়াতে হল, তার কারণ এই ববিতাই।
আরও পড়ুন, ডিএ মামলার রাজ্য়ের আবেদন খারিজ, ৩ মাসের মধ্য়ে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ