পার্থ যেন বাবা নিরালা আর অর্পিতার অবস্থা টিঙ্কা সিং, এসএসসি দুর্নীতিতে এখন পপুলার ওয়েব সিরিজের ছায়া

দুর্নীতি নিয়ে কম চর্চা হয় না। বলতে গেলে যে কোনও দেশেই দুর্নীতিকেই বলা হয় আদর্শ মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় শত্রু। দুর্নীতি একাধিক আকারে এবং একাধিক রূপ ধারণ করে হয়। এই সমস্ত দুর্নীতির কেন্দ্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে মূল বা শিকড় বলে গণ্য হয় তা হল অর্থ। অনৈতিকভাবে এই অর্থকে বিপুল মাত্রায় কয়রাত্ত করার জন্য দিনভর কত ধরনের দুর্নীতি যে বিশ্ব জুড়ে নির্মিত হয় তার ইয়ত্তা নেই। পার্থ এবং অর্পিতা এপিসোডে অর্ধশত কোটি-র অঙ্ক পার করা মূল্যরাশি এই দুর্নীতির ছবিটাকে সামনে নিয়ে এল। 
 

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় হয়েছে আশ্রম বলে একটি ওয়েবসিরিজ। যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবা নিরালা এবং তাঁর সহযোগী বুপাস্বামী। ওয়েবসিরিজ-টিতে দেখানো হয়েছে যে কীভাবে মন্টি সিং এবং বুপা নামে দুই ছিঁচকে চোর ও খুনি আস্তে আস্তে পুরো সমাজব্যবস্থা থেকে শুরু করে আইন এবং প্রশাসনকে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। কীভাবে এই দুই জন মিলে নিজেদের মাসিহা-তে পরিণত করে। এই ওয়েব সিরিজেই ঘটনাক্রমে দেখা যায় কীভাবে টিঙ্কা সিং নামে নবীন জনপ্রিয় গায়ককে বাবা নিরালা এবং বুপাস্বামী তাঁদের তৈরি করা জালে ফাঁসায় এবং তাদের নামের আড়ালে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসার সংস্থাও খুলে বসে। আইবি অফিসারদের হাতে ধরাও পড়ে টিঙ্কা এবং তাঁর সঙ্গী। কিন্তু বাবা নিরালার তৈরি করা ফন্দিতে মুক্তিও পেয়ে যায় তারা। 

এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে কীভাবে আশ্রমের বাবা নিরালার সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের! আবার টিঙ্কা সিং-এর সঙ্গেই বা কোথায় মিল অর্পিতার! ইডি-র তদন্তকারীদের সামনে বসেই অপারেশন ক্লাবটাউন হাইটস-এ নজর রেখেছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায় ও পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। ইডি-র তদন্তকারী অফিসাররা দুজনকেই দুটো মুখোমুখি সোফায় বসিয়েছিল। আর তাঁদের সামনে চালানো টিভিতে লাইভ টেলিকাস্ট চলছিল ক্লাবটাউন হাইটস-এ কীভাবে অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের নামাঙ্কিত ফ্ল্যাটে উদ্ধার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।  

Latest Videos

কখনও হতাশায় ভেঙে পড়েছেন অর্পিতা। আবার কখনও চিৎকার করে বলেছেন, 'স্যার আমার কথাটা শুনুন এসব আমার নয়। আমার কোনও অধিকারই ছিল না এই সব টাকা এবং গয়না। আমি শুধুমাত্র একজন কেয়ারটেকার। আবার কখনও অবাক বিস্ফারিত হয়ে বলেছেন, এই ফ্ল্যাটে এত টাকা ছিল, বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিছুই জানি না। কে কখন এসে ফ্ল্যাটে টাকা রেখে যেত তা আমি জানতাম-ই না। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লোকেরাই ফ্ল্যাটে বেশি আসত। তাঁদের কাছেই চাবি থাকত। ওরা যে এভাবে বিছানার নিচে, বাথরুমে বেসিনের কাবার্ডের লকারেও যে টাকা ঢুকিয়ে রেখেছে তা আমার জানাই ছিল না।' এসব কথা বলেই কখনও ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের সামনে হাতজোড় করেছেন অর্পিতা আবার কখনও স্বগোক্তির মত বলে গিয়েছেন, 'জানতামই না কি হচ্ছে, বুঝতে পারিনি। আমার নাম ব্যবহার করে যে এত সব কাণ্ড হয়েছে আমার গোচরেই ছিল না। আমি ছিলাম শুধুমাত্র এক বেতনভুক্ত কর্মচারি। চাকরি দেওয়া হবে এবং কিছু সংস্থার কেয়ারটেকার হিসাবে কাজ করতে হবে এই বলে আমার কাছ থেকে প্যান ও আধার কার্ডের প্রতিলিপি নেওয়া হয়েছিল। এমনকী আমার এক আত্মীয় এই সংস্থায় গাড়ি চালাবে বলে তাঁর কাছ প্যান ও আধার কার্ড নেওয়া হয়েছিল। এখন শুনছি তাঁর নামেও একাধিক সংস্থা খোলা হয়েছে। তিনিও নাকি ডাইরেক্টর। বিশ্বাস করুন এই সব সম্পদ এবং সম্পত্তিতে আমার এবং আমার আত্মীয়ের এককণা মাত্র অধিকার নেই। এমনকী যে গয়না দেখতে পাচ্ছেন তার কয়েকটা মাত্র পরেছিলাম। বাকি গুলো পরতে পারিনি, কারণ ওগুলো আমার নয়।' 

আশ্রমে টিঙ্কা সিং-ও অর্পিতার মতোই আইবি অফিসারদের পায়ে পড়ে গিয়েছিল। জানিয়েছিল তাঁদের নামে হওয়া ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এবং সংস্থায় যে একাধিক বেআইনি লেনদেন হয়েছে তার বিন্দু বিসর্গ তারা জানতেন না। টিঙ্কা সিং-এর অবস্থা শুনে তখন মুচকি মুচকি হাসছিলেন বাবা নিরালা এবং বুপা স্বামী। সোফায় বসা পার্থ আদৌ হেসেছেন কি না তা জানা যায়নি। তবে, ইডি সূত্রে খবর সোফায় বসা পার্থর মুখটা ছিল থমথমে। টিভি-তে সমস্ত দেখতে দেখতে এবং অর্পিতার কথা শুনতে শুনতে চশমাটা খুলে পাশে রেখেছেন, আবার কখনও পরেছেন। বলতে গেলে এক অস্বাভিকতা ফুটে উঠেছিল পার্থর মুখে। আশ্রমে-র কাহিনি এতদিন পর্যন্ত যে জায়গায় পৌঁছেছে তাতে বাবা নিরালাকে কেউ কাবু করতে পারেননি, বরং অদ্ভুতভাবে তিনি একের পর দাবার চালে মাত দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। আশ্রমের কাহিনি আরও রোমহর্ষক দিকে মোড় নিচ্ছে। কিন্তু, বাবা নিরালার মতো কি সৌভাগ্যবান হতে পারবেন পার্থ। কারণ, বাবা নিরালার মতো পার্থকে দেখেও মনে হচ্ছে তিনি দুর্নীতির মাথা হয়েছেন কিন্তু তিনি আবার কোথাও নেই- যাদের মুখ বারবার সামনে আসছে তাঁরা হলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বা অন্যকেউ। যারা কোনও না কোনও কারণে রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পরে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধারীর কাছ থেকে অনৈতিক ফায়দা পেয়েছেন। কিন্তু ফায়দা নিতে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে গেলে যে কী অবস্থা হতে পারে তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়। 

যদিও, ইডির তদন্তকারীদের মতে, অর্পিতা-র আচরণও স্বাভাবিক নয়। কারণ একেক সময় একেক কথা বলছেন তিনি। বেলঘড়িয়ার রথতলায় ক্লাবটাউন হাইটসে তল্লাশি অভিযান চলার আগেই অর্পিতা-ই বলেছিলেন ওই ফ্ল্যাটেও প্রচুর টাকা রাখা রয়েছে। গয়না রয়েছে। আবার সেই অর্পিতাই টাকা উদ্ধারের ছবি দেখে বলছেন তিনি জানতেন না যে ফ্ল্যাটে এত টাকা রাখা ছিল। তাহলে প্রশ্ন হল অর্পিতার নামে ফ্ল্যাট হলেও তাতে আনাগোনা ছিল অন্য কারও! তাঁরা কারা? তাহলে কি যে টা শোনা যাচ্ছে যে উদ্ধার হওয়া এই কোটি কোটি কালো টাকা এবং গয়না আসল মালিকানা পার্থ-এর থেকে উপরে থাকা কারও! মানে পার্থ তা হলে এই দুর্নীতি তদন্তের কান না মাথা! যদি কান হন তাহলে মাথা-র খোঁজ কি পাবে ইডি? প্রকাশ্যে আসবে কি তাঁর নাম?   
আরও পড়ুন------ 
বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে মমতার মন্ত্রিসভা, পদত্যাগ করতে হতে পারে সমস্ত মন্ত্রীকে, 'তারপর কী' 

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

২৬ এর নির্বাচনে কী থাকবেন ফিরহাদ হাকিম? বাতলে দিলেন শমীক ভট্টাচার্য #shorts #shortsfeed #bjp #tmc
হাড়োয়ায় তৃণমূল জিততেই বিজেপি প্রার্থীর জমি তচনচ, ক্ষোভ উগরে যা বললেন Samik Bhattacharya
'ভোট ব্যাঙ্কের জন্যই WAQF Board তৈরি করেছে Congress' বিস্ফোরক PM Modi | PM Modi Speech
Live | India vs Australia : পারথে সাড়ে তিন দিনে টেস্ট জয়, বিদেশের মাটিতে ভারতের সেরা সাফল্য?
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু! তার আগেই বিরোধীদের কড়া বার্তা PM Modi | Parliament Winter Session 2024