নিউটাউনের শান্ত পাড়া, গরমের নিঝুম দুপুর। আচমকা কানফাটানো গুলির আওয়াজ। সাদা বিল্ডিংগুলোর মাঝ দিয়ে তীরবেগে ছুটে বেরিয়ে গেল দুই যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার নিস্তব্ধতাকে খান খান করে গুলি চলল। ওই দুই যুবকের পিছনেই রাইফেল হাতে ছুটতে দেখা গেল পুলিশকে। ঠিক যেন কোনও হিন্দি সিনেমার শুটিং চলছে। তবে রিল লাইফ নয়, রিয়েল লাইফ হিরোদের হাতে নিকেশ হল দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার।
তবে খতম হওয়ার আগে মারণ কামড় বসালো তারাও। নাইন এম এম পিস্তল দিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম করল এক ইন্সপেক্টরকে। তবে রুদ্ধশ্বাস এক গল্পের শেষে জয়ের হাসি কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-ই হাসল। নিকেশ করা গেল দুই কুখ্যাত অপরাধীকে।
মৃত দুই দুষ্কৃতীর মধ্যে এক জনের নাম জয়পাল সিংহ ভুল্লার। এই ব্যক্তি পঞ্জাবে কুখ্যাত গ্যাংস্টার হিসেবে পরিচিত ছিল। মাদক মামলায় তদন্তেও জয়পালের নাম উঠেছে। তারপরেই সে ফেরার হয়ে যায়। জয়পাল নিউটাউনের সাপুরজি আবাসনে লুকিয়ে ছিল তা খবর পেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। রেইকি করেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর অস্ত্র ও মাদক মামলায় নাম রয়েছে জয়পালের।
দ্বিতীয় জন জসসি কড়ার। এই দুজনের ব্যাকগ্রাউন্ড শুনে চোখ কপালে উঠেছে তাবড় পুলিশ কর্তাদের। পুলিশ সূত্রে খবর এই দুই গ্যাংস্টার ২২শে মে থেকে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকছিল। ১৫ই মে লুধিয়ানায় অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল এরা। এদের মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ১৯ লক্ষ টাকা। ভুল্লারের বাবা ছিলেন পঞ্জাব পুলিশের এএসআই। ভুল্লার নিজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। কিন্তু কীভাবে তার অপরাধ জগতে আনাগোনা শুরু হল, তা জানা যায়নি।
একের পর এক অপরাধ করে গ্যাংস্টার তৈরি হওয়া ভুল্লারের নামে তোলাবাজি, একাধিক খুন, ডাকাতির মতো ৪০টি অভিযোগ রয়েছে। পঞ্জাব পুলিশের থেকে খবর পেয়েই নিখুঁত প্লট ছকে ফেলে এসটিএফ। তার পর শুরু হয় অপারেশন। তবে এসটিএফ যে তলে তলে তাদের ওপর নজর রাখছে, ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি ভুল্লাররা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায় এসটিএফের আধিকারিকরা।
দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে ৫টি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৮৯ রাউন্ড গুলি ও ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এসটিএফ এডিজি বিনীত গোয়েল।