
রাজ্য বিজেপিতে (Bengal BJP) অব্যাহত রয়েছে অশান্তি। প্রায়ই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে বহু নেতাকে। বিজেপিতে আড়াআড়ি বিভাজন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বঙ্গ নেতৃত্বের মধ্যে সেই ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়েই এবার দিল্লি (Delhi) সফরে গেলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)। সংসদের বাজেট অধিবেশনে (budget session) যোগ দিতে রবিবার দিল্লি উড়ে যান তিনি। বাজেট অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও তিনি দেখা করবেন বলে জানা গিয়েছে। সেখানে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি নালিশ জানাতে পারেন বলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে।
এদিকে নৈশভোজের আড্ডায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের বৈঠক কোনও নতুন বিষয় নয়। জাতীয় রাজনীতিতে এই ধরনের চর্চা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে। তার সঙ্গে টি-পার্টি বা মধ্যাহ্ন ভোজও বেশ প্রচলিত একটি বিষয়। আসলে এই সব পার্টিতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল স্থির করা হত। পার্টি ছিল শুধুমাত্রই একটা অছিলা। তার ফাঁকেই রণকৌশল স্থির করতেন নেতা-মন্ত্রীরা। আর এবার বাংলার রাজনীতিতে নতুন ধারা হল পিকনিক। এই ধারার সূত্রপাত হয়েছে শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরেই। নিজের সংসদীয় এলাকার সংগঠন মজবুত করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আর সেই পিকনিকে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে দলের বিক্ষুব্ধ নেতা ও দল থেকে বহিষ্কৃতরা। পিকনিকের মাধ্যমেই রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ইতিমধ্য়ে ৫টি পিকনিকের আয়োজন করেছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজ্য বিজেপিতে রদবদল হয়েছে। সেই রদবদলের পর থেকেই বিজেপিতে শুরু হয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। মতুয়া-গড়ের পাঁচ বিধায়ক প্রথম প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তাঁরা বিজেপির হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দেন। সেই প্রতিবাদের শুরু। তারপর ক্রমেই বিদ্রোহীর সংখ্যা বেড়েছে। এমনকী, শান্তনু ঠাকুর নিজে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন। গতকাল রাতেও তাঁর বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন রীতেশ তিওয়ারি ও জয়প্রকাশ মজুমদার। শনিবারের বৈঠক শেষে জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দিল্লি যাচ্ছেন। তার আগে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। দুই জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন একজায়গায় বসেন, অবশ্যই রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন তিনি। তবে দলের কাজ করে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে আজ দিল্লি যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে শান্তনু বলেন, "এরা ৩০ বছর ধরে দল করছে আর আজ তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হল। এরা কোথায় যাবে? এরা তো আর তৃণমূল, সিপিএম বা কংগ্রেসের কারও সঙ্গে গিয়ে তো আর বসেনি। সেই তো বিজেপির মন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েই বসেছে। এতে সমস্যার কি রয়েছে?"
নাগরিকত্ব আইন (Citizenship Amendment Act) লাগু হওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৯ জানুয়ারি। কিন্তু, দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তা লাগু হয়নি। আর সেই কারণেই তা নিয়ে মতুয়া সদস্যদের মনে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন শান্তনু। এনিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, "সিএএ তো কিছু হয়নি। বলেছিল নাগরিকত্ব আইন লাগু করবে। লাগু হওয়ার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার পরও তা এখনও পর্যন্ত লাগু হয়নি। আসলে আমাদের সংগঠনের সদস্যরাই এর জন্য সমস্যায় পড়ছেন। আমাদের নিজেদের একটা সংগঠন আছে। তো এটা লাগু না হলে তা নিয়ে আমাদের উপরও চাপ আসে সংগঠনের তরফে। তাই এনিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। কারণ এটা স্পষ্টভাবে জানা খুবই দরকার।"